শ্রী ভট্টাচার্য, কলকাতা: এভাবেও ভালো থাকা যায়, লড়াই লড়া যায়, প্রমাণ করে দিল বাংলার দুই মেয়ে (WB Madhyamik Result 2025)। মাধ্যমিক পাস করে নজির গড়ল দুজনে। অবাক হয়ে দেখল সকলে। তাদের লড়াই আর পাঁচটা সাইভাইবাল সিরিজের থেকে কম কিছু নয়। জানবেন তাঁদের বাস্তব জীবনের গল্প! তাহলে পড়তে থাকুন শেষ অবধি।
শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা ফুটপাতে থাকে তারা। আর্থিক বাধা-সহ নানা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে, মাথার উপর ছাদ না থাকা সত্ত্বেও, সনিয়া ঘোষ, প্রিয়াঙ্কা প্রামাণিক জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় উতরে গেল অনায়াসেই। কীভাবে সম্ভব হল এই অসাধ্য সাধন! সনিয়া টালিগঞ্জ গর্ভমেন্ট স্কুলে পড়ে। প্রিয়াঙ্কা কালীধন ইনস্টিটিউশনের ছাত্রী। একজন পেয়েছে ২১০, অন্যজন পেল ২১২। অবশ্যই নম্বর দুই অতি সাধারণ। পাতি বাংলায় যাকে বলে টেনে কষে পাস। কিন্তু জানেন, কী ভয়ানক প্রতিকূলতার সামনে দাঁড়িয়ে ওরা এই লড়াইটা লড়েছে!
সেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত মিত্রাদেবী এ প্রসঙ্গে কথা বলেছেন এদিন। সংবাদ মাধ্যমকে তিনি জানান, ‘করোনার ঠিক আগে রাস্তার ফুটপাতে দুই মেয়ের সঙ্গে প্রথম আলাপ হয়। ঠিকমতো পেট চলত না। তাদের দু’বেলা খাবার দেওয়ার দায়িত্ব ছিল মিত্রাদেবীর উপর। দুই মেয়েই দু’জনে খুব ভাল আঁকে। পড়াশোনাও খারাপ নয়। কিন্তু ওই যে অর্থের ব্যাপক অভাব। পড়াশোনার সুযোগ পায়নি তারা। এরপর দুই মেয়ের হয়ে লড়লেন মিত্রাদেবী। পড়াশোনা তারাও যাতে করতে পারে, এটাই চেয়েছিলেন তিনি। যেমন চাওয়া তেমন পাওয়া। পরীক্ষা দিয়ে সনিয়া ও প্রিয়াঙ্কাকে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি করা হল।
মেয়ে দুটো এগিয়ে গেল মাধ্যমিক পর্যন্ত। মিত্রাদেবীর টিউশনে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মাধ্যমিকের প্রস্তুতি নেয় সনিয়া, প্রিয়ঙ্কা। সারাদিন বাড়িতে কাটলেও রাতে তাদের ফিরতে হত খোলা আকাশের নিচেই। এই সমস্ত অনটন, প্রতিকূলতা শেষমেশ আটকাতে পারল না দুই মেয়েকে। এবার মাধ্যমিক পরীক্ষায় মেয়ে দুটোও তাদের যোগ্যতা প্রমাণ করেছে দেখে খুব খুশি মিত্রাদেবী। কাঁদো কাঁদো স্বরে দুই মেয়েরও উত্তর, মিত্রাদেবী না থাকলে পড়াশোনা করাই হত না!
আরও পড়ুন: ‘এই ফল আশা করিনি’- চোখে জল…..কীভাবে অসাধ্য সাধন করলেন মাধ্যমিক টপার আদৃত?
কিন্তু মাধ্যমিকের পর উচ্চ মাধ্যমিক। সে ব্যবস্থাটা কীভাবে হবে? সে তো অনেক টাকার ব্যাপার। যদিও মিত্রাদেবীর দাবি, নিশ্চয়ই কিছু ব্যবস্থা করবেন। মেয়ে দুটোর পাশে ঢাল হয়ে দাঁড়াবেন।