শ্রী ভট্টাচার্য, কলকাতা: দু’দিন আগে আহমেদাবাদে ঘটে যাওয়া সে ভয়ানক বিমান দুর্ঘটনা আজীবন অবিস্মরণীয় হয়ে থেকে যাবে। চোখের নিমেষে ধুলিষ্যাৎ হয়ে যাওয়া এতগুলো প্রাণ, তাঁদের পরিবারের হাহাকার, কান্না, যন্ত্রণা ভুলবে না এ দেশ। এমন করুণ পরিস্থিতিতে, কলকাতা এয়ারপোর্ট বা এয়ারপোর্টের আশেপাশের মানুষও কি নিশ্চিন্ত থাকতে পারবে? এমনই কিছু তথ্য বেরিয়ে আসছে, যা জানলে হয়ত গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠবে আপনার!
কলকাতায় বাড়তে থাকা আবর্জনা স্তূপ বড় বিপদের কারণ হতে পারে। ক্রমশ বিমানবন্দরের দিকে এগিয়ে আসা জনবসতি বড় বিপদ টানছে। অসামরিক বিমান নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিজিসিএ (DGCA) যেমন বৃহস্পতিবারের বিমান দুর্ঘটনার কারণ হিসাবে পাখির ধাক্কাকে হাইলাইট করছে, একই অবস্থা রয়েছে কলকাতারও। বিমানবন্দর সূত্রে খবর, কলকাতাতে বহুবার বিমানে ধাক্কা মেরেছে পাখি।
কলকাতার বিমানে (Kolkata Airport) কতবার পাখির ধাক্কা লাগল?
এখন একটি তালিকা দেখাব, যা দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন যে কতটা বিপদ হাতে নিয়ে কলকাতার আকাশ থেকে উড়ছে বিমান। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান বলছে,
- ২০১৮ সালে পাখির ধাক্কা লেগেছে ৯টি বিমানে।
- ২০১৯ সালে পাখির ধাক্কা লেগেছে ৭টি বিমানে।
- ২০২০ সালে পাখির ধাক্কা লেগেছে ১০টি বিমানে।
- ২০২১ সালে পাখির ধাক্কা লেগেছে ১০টি বিমানে।
- ২০২২ সালে পাখির ধাক্কা লেগেছে ৯টি বিমানে।
- ২০২৩ সালে পাখির ধাক্কা লেগেছে ১৮টি বিমানে।
- ২০২৪ সালে পাখির ধাক্কা লেগেছে ২৬টি বিমানে।
- ২০২৫ সালে পাখির ধাক্কা লেগেছে ৪টি বিমানে। এপ্রিল মাস পর্যন্ত ডেটা এটি।
আরও পড়ুন: বিরাট সিদ্ধান্ত ভারতীয় রেলের, রাশিয়ার পারমাণবিক সংস্থার সঙ্গে শুরু আলোচনা
কিন্তু কী কারণে এয়ারপোর্ট চত্বরে এত পাখির উপদ্রব?
মূলত বিমানবন্দর সংলগ্ন যে ৫ পুরসভা রয়েছে, তা ঘিরেই যত ঝামেলার সূত্রপাত। মূলত, প্রত্যেক পুরসভারই সমস্যা গৃহস্থলীর আবর্জনা স্তূপ, যা পাখিদের খাদ্য।
প্রথমত: বিমানবন্দর থেকে ৭০০ মিটার দূরে দমদম পুরসভার এইচএমবি (HMB) ভ্যাটে আবর্জনা স্তূপ পাখিদের আনাগোনা বাড়ায়।
দ্বিতীয়ত: দমদম পুরসভার ঠিক আড়াই কিলোমিটার দূরে সাঁপুই পাড়া, রাজবাড়ি, সিদ্ধেশ্বরী লেকের জলাশয়ের ধারে নোংরা খাবারের জন্য পাখির আনাগোনা ভর্তি।
তৃতীয়ত: কলকাতা বিমানবন্দর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে এবার নিউ ব্যারাকপুর পুরসভায় জমতে থাকা আবর্জনার জন্য পাখিরা আসে এখানে।
চতুর্থত: আবার দিগবেরিয়া বাদু রোড মাইকেল নগরেও রয়েছে ভ্যাট। সেখানেও পাখিরা আনাগোনা করে।
পঞ্চমত: উত্তর দমদম পুরসভার এয়ারপোর্ট গেট নাম্বার তিনের কাছেও রয়েছে ভ্যাট এবং বাজার।
ষষ্ঠত: আবার বিমানবন্দরের পশ্চিম দিকে এক কিলোমিটার দূরের বাজারে প্রতিনিয়ত ফেলা হচ্ছে আবর্জনা।
সপ্তমত: বিমানবন্দরের পাঁচিল থেকে ৩০ ফুট দূরেই কম্প্যাক্টররে উন্মুক্তভাবে ফেলা রয়েছে আবর্জনা। পাখিদের উপদ্রব তো হবেই।
অষ্টমত: বেলঘড়িয়া এক্সপ্রেসওয়ে ডাম্পিং গ্রাউন্ডের আবার চারটি পুরসভার আবর্জনা ফেলা হয়। পাখিরা আসে সে টানে।
নবমত: কলকাতা বিমানবন্দর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই স্থানে আবার সারাদিন রাত আগুন জ্বলে, ধোঁয়া ওঠে। সে ধোঁয়া বিমান চলাচলে দৃশ্যমান্যতার ক্ষেত্রেও বাধা নিয়ে আসে।
