শ্রীজিতা ঘোষ, কলকাতা: আজ আপনাদের জানাতে চলেছি এমন এক স্কুলের কথা, যেখানে একজন ছাত্র কিংবা ছাত্রীও অভুক্ত থাকে না। বাঁকুড়ার (Bankura School) ওন্দার পুনিশোল অঞ্চলের ভোলা হিরাপুর নেতাজি সুভাষ উচ্চ বিদ্যালয় রাজ্যের অন্যান্য সরকারি বিদ্যালয়ের সামনে এক অভিনব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে—বিদ্যালয়ের নিজস্ব সবজি বাগান চালু করে মিড ডে মিলের (Mid Day Meal) জন্য পুষ্টিকর খাবারের জোগান দিচ্ছে নিজেরাই।
২০২৪ সালে, যখন বাজারে শাকসবজি ও আলু-পেঁয়াজের দাম সাধারণ মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে পৌঁছে যাচ্ছিল, তখনই বিদ্যালয়ের পরিচালনা সমিতি এই বাগান তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। আজ, ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে, এই বাগান থেকে পাওয়া ফলন মিড ডে মিলের বেশিরভাগ খাদ্যজোগান পূরণ করছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তরুণ কুমার চ্যাটার্জী জানালেন, ‘ছাত্র-ছাত্রীদের সম্পূর্ণ পুষ্টি নিশ্চিত করতেই আমরা এই পদক্ষেপ নিই। শুধু মিড ডে মিল নয়, নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারাও চাইলেই এখানে খাবার পায়।’
কী কী চাষ হয় স্কুলের খেতে?
বাগানে এখন চাষ হচ্ছে বরবটি, বেগুন, বিনস, টমেটো, ঝিঙে, লাউ, কুমড়ো, পুঁই, গাজর এবং ঢেঁড়স। এছাড়াও পরিবেশসচেতনতার বার্তা সকলের কাছে পৌঁছে দিতে এখানে লাগানো হয়েছে শাল, সেগুন, বহেড়া, সিঁদুর এবং রুদ্রপলাশের মতো গাছও।
বিদ্যালয় মানেই দ্বিতীয় ঘর
একজন ছাত্র-ছাত্রীর কাছে বিদ্যালয় শুধু শিক্ষার জায়গা নয়—এটি একটি সামাজিক, মানসিক ও পুষ্টিরও আশ্রয়স্থল। এই বিদ্যালয় সেই দায়িত্ব পালন করছে এমনই বলছে সেখানকার শিক্ষক মহাশয়গণ। তাঁরা আরও বলছেন, শিশুদের জন্য খাবার, পড়াশোনা, খেলাধুলা এবং সামাজিক বন্ধন—সবই আছে একই ছাদের তলায়।
প্রশংসিত উদ্যোগ
এই সবজি দিয়ে মিড ডে মিল তৈরি, এ যেন এক মডেল। ইতিমধ্যেই এই বিদ্যালয় স্থানীয় প্রশাসন ও অন্যান্য বিদ্যালয়ের কাছেও প্রশংসা কুড়িয়েছে। সরকারি বিদ্যালয়ের পরিকাঠামোয় কীভাবে স্বনির্ভরতা ও পুষ্টি একসঙ্গে অর্জন করা যায়, তার এক জীবন্ত উদাহরণ হয়ে উঠেছে এই ভোলা হিরাপুর নেতাজি সুভাষ উচ্চ বিদ্যালয়।
এই ধরনের প্রকল্প শুধু একটি বিদ্যালয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। রাজ্য জুড়ে আরও স্কুলে এমন উদ্যোগ ছড়িয়ে পড়লে, শিক্ষাক্ষেত্রে পুষ্টি, পরিবেশ এবং স্বনির্ভরতার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে।