ডবল ঝটকা! চাকরি হারানোর পর আরও বড় বিপদ কর্মহীনদের

group c d employee

ডবল ঝটকা! চাকরি হারানোর পর আরও বড় বিপদ কর্মহীনদের

Srijita Ghosh

Published on:

শ্রীজিতা ঘোষ, কলকাতা: কলকাতা হাইকোর্টে  (Calcutta High Court) এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে (SSC Recruitment Scam) চাকরি হারানো গ্রুপ সি (Group C) ও গ্রুপ ডি (Group D) প্রার্থীদের ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্তে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেয়া হয়েছে। বিচারপতি অমৃতা সিনহার নির্দেশে এই স্থগিতাদেশ আপাতত ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে—যা রাজ্য সরকারের জন্য এক বড় ধাক্কা।

চলতি বছরের মে মাসে রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছিল, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী গ্রুপ সি প্রার্থীদের প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকা এবং গ্রুপ ডি প্রার্থীদের ২০ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হবে। এই ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্তকে কলকাতা হাইকোর্টে একাধিক পক্ষ চ্যালেঞ্জ করে মামলা দায়ের করে। অভিযোগ ছিল, এই ভাতা দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। শুনানিতে বিচারপতি অমৃতা সিনহা রাজ্যকে একাধিক প্রশ্ন করেন এবং রাজ্যের পক্ষ থেকে সন্তোষজনক উত্তর না পাওয়ায় স্থগিতাদেশ দেন। আপাতত ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত স্থগিত থাকবে। এই নির্দেশনার ফলে রাজ্যের ওই ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনায় বাধা পড়ল।

রাজ্য সরকার সম্প্রতি প্রায় ১৪০টি নতুন জনজাতি/উপশ্রেণীকে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণী (OBC) হিসেবে চিহ্নিত করে নতুন তালিকা প্রকাশ করে। এর মধ্যে ছিল বহু মুসলিম ও অ-মুসলিম সম্প্রদায়। এই তালিকা ভিত্তি করে সরকারি সুযোগ-সুবিধা ও কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ চালু করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল রাজ্য সরকার। তবে মঙ্গলবারের শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্যের সেই নতুন ওবিসি বিজ্ঞপ্তির উপর ৩১ জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করে।

আদালতের পর্যবেক্ষণ:

রাজ্য সরকার ২০১২ সালের আইন অনুসরণ না করে, হঠাৎ ১৯৯৩ সালের পুরনো আইনের আশ্রয় নিয়েছে, যা আদালতের মতে আদেশ অমান্য। আদালত স্পষ্টভাবে জানায়, ‘২০১২ সালের আইন অনুযায়ী সংশোধন সম্ভব ছিল। কিন্তু রাজ্য তা করেনি। বরং সুপ্রিম কোর্টে মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যা অনুচিত।’ বিচারপতিরা বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টে চূড়ান্ত রায় না আসা পর্যন্ত এই তালিকা কার্যকর করা যাবে না।’

শিক্ষা ও ভর্তি প্রক্রিয়ায় প্রভাব:

নতুন তালিকার ভিত্তিতে কলেজে ভর্তি ও সংরক্ষণ সুবিধা আপাতত স্থগিত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখন পুরনো OBC তালিকা অনুসারে প্রক্রিয়া চালাবে বা বিকল্প নির্দেশনার অপেক্ষায় থাকবে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া:

রাজ্য সরকার এই স্থগিতাদেশকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের ফল হিসেবে দেখছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আইন নিজের পথে চলবে, তবে আমরা জানি কারা পিছনে থেকে চালাচ্ছে। রাজ্য সংবিধান অনুযায়ীই কাজ করেছে।’

কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্যের নতুন ওবিসি বিজ্ঞপ্তি ৩১ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করেছে। সুপ্রিম কোর্টে রায় না আসা পর্যন্ত রাজ্য নতুন পদক্ষেপ নিতে পারবে না। ভর্তি ও সরকারি সুযোগ সুবিধা আপাতত পুরনো তালিকা অনুযায়ী চলবে। রাজনৈতিক চাপ ও সংবেদনশীলতা বাড়ছে।

স্থগিতাদেশ — কী ঘটেছে?

ভাতা কর্মসূচী, রাজ্য সরকার চালু করেছিল ‘West Bengal Livelihood and Social Security Interim Scheme, 2025’, যার আওতায় Group-C কর্মীদের ২০০০০টাকা এবং Group-D কর্মীদের ২৫০০০টাকা ভাতা দেওয়া হবে বলে ঘোষণা হয়েছে। কিন্তু এখানে একটা আইনি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে; হাইকোর্টে মামলাকারীরা আবেদন করেন যে, সুপ্রিম কোর্টের আদেশে শুধু শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হয়েছে; এই ভাতা তাই ‘tainted’ বা বেআইনি কর্মীদের জন্য প্রযোজ্য নয়।

বেঞ্চের বক্তব্য, রাজ্যের দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ কী? কতজন পাবেন, কবে থেকেপাবেন—এসব বিষয় এখনও পর্যন্ত অস্পষ্ট। ‘ঘরে বসে তারা টাকা পাবেন?’, ‘রাজ্য আইনসিদ্ধভাবে কীভাবে এটি করতে পারে?’—এমনই প্রশ্ন উঠছে। শুনানি শেষে বিচারপতি সিনহা বলেন, ‘এখনই কোনো টাকা দেওয়া যাবে না’, এবং চূড়ান্ত রায়ও ঘোষণা করা যাবে না।

সঙ্গে থাকুন ➥