তাঁকে অবজ্ঞা বা উপেক্ষা করার ক্ষমতা হয়নি বাংলাছবির আমদর্শকের। শোনা যায়, দূরদর্শনে যখন মাত্র একটি বাংলা চ্যানেলে সপ্তাহের একদিনই বাংলাছবির স্লট ছিল। তখন যে-যে দিনগুলিতে উত্তমকুমার অভিনীত ছবি থাকত সেই দিনগুলো শুনশান হয়ে যেত রাস্তা ঘাট। তার হাসি, তার অভিনয়, তার ক্যারিশ্মা উপেক্ষা করে কার সাধ্যি।
এইটুকু পড়েই হয়ত বুঝে গেছেন আজ আমরা কার কথা বলছি! আমাদের আজকের আলোচ্য ব্যক্তিত্ব হলেন বাঙালির চিরকালীন আইকন উত্তম কুমার (Uttam Kumar)। মৃত্যুর পরে চল্লিশের বেশি বছর পেরিয়ে গেলেও উত্তমকে ঘিরে আজও বাঙালির উন্মাদনার মুগ্ধতার কোনও শেষ নেই। তবে আজকের গল্প আমরা শুনবো আরেক কিংবদন্তি তারকা সত্যজিৎ রায়ের (Satyajit Ray) মুখ দিয়ে।
বাংলা ইন্ডাস্ট্রির এই লেজেন্ডারি মানুষটির আলাদা কোনো পরিচয় দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়না। এহেন পরিচালকই একবার উত্তম কুমারকে নিয়ে বেশকিছু মন্তব্য করেছিলেন। তাঁর কাল্ট ক্লাসিক মুভি ‘নায়ক’র শুটিং চলাকালীন ঘটে যাওয়া কিছু ছোটো ছোটো ঘটনার কথা তুলে ধরেছিলেন পরিচালক।
এক সাক্ষাৎকারে পরিচালক জানান, ছবিতে উত্তম কুমার এবং শর্মিলা ঠাকুরের মধ্যে প্রথম কথোপকথনে, তিনি তার অটোগ্রাফ চান। এই দৃশ্যটি শ্যুট করার জন্য, উত্তমের পকেটে একটি কলম ছিল যা দিয়ে তার অটোগ্রাফ দেওয়ার কথা ছিল। যাইহোক, উত্তম যখন সই করতে শুরু করেন, তখন কলমের কালি শুকিয়ে গিয়েছিল এবং কিছুই লেখা ছিল না।
সত্যজিৎ রায় কাট বলতেই যাচ্ছিলেন, তখনই আকস্মিকভাবে উত্তম এক কাজ করে বসেন। সংলাপের মাঝখানেই কলমটি নাড়া দিলেন। তাতেও কাজ না হওয়ায় সামনে থাকা জলের গ্লাসে নিব ডুবিয়ে সই করলেন। আর এই গোটা ঘটনা চলাকালীন তার সংলাপ বলা কিন্তু বন্ধ হয়নি। বলা ভালো, দেখে কারো বোঝারই ক্ষমতা ছিলনা যে, এটি পূর্বপরিকল্পিত ছিলনা।
এই প্রসঙ্গে সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন, এই ধরণের পরিস্থিতি এত সুন্দর ভাবে সামাল দেওয়া এতটাও সহজ নয়। শুধুমাত্র সর্বোচ্চ মানের একজন তারকাই এরকম উপস্থিত বুদ্ধি নিয়ে পরিস্থিতি উতরে দিতে পারে। তিনি আরো বলেছিলেন, ‘একজন শিল্পীকে সর্বদা তার সেরা কাজ দিয়ে বিচার করা উচিত। উত্তমের মধ্যে বহুমুখী প্রতিভা, স্বতঃস্ফূর্ততা এবং আত্মবিশ্বাসের বিরল গুণাবলী ছিল। এই ধরনের সংমিশ্রণ সহজে আসে না এবং অদূর ভবিষ্যতে পশ্চিমবঙ্গের সিনেমায় কেউ তার জায়গা নিতে পারবে বলে মনে হয়না।’