নেই কোনো ভিড়, কোলাহল, দীঘা ভুলে এবার বেড়িয়ে আসুন কলকাতার কাছের এই সুন্দর সি বিচ থেকে!

নিউজশর্ট ডেস্কঃ এই শীতের সময় বহু মানুষেরই প্রিয় ভ্রমণ ডেস্টিনেশন হয়ে যায় সমুদ্র। তবে ধারে কাছে কম সময়ের মধ্যে ঘোরার জন্য দীঘা(Digha) এবং মন্দারমনি(Mandermoni) সকলেরই পছন্দের জায়গা। তবে এখন শুধুমাত্র দীঘা আর মন্দারমনি নয়, বেশ কিছু লুকানো সমুদ্র সৈকতের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। যারা একটু কোলাহল, ভিড় থেকে দূরে গিয়ে কিছুটা সময় উপভোগ করতে চান তাদের কাছে এই সমস্ত ডেস্টিনেশন একেবারেই উপযুক্ত। আজকে এই প্রতিবেদনে এমনই একটি জায়গা সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হলো।

বর্তমানে দীঘা এবং মন্দারমনির পাশাপাশি খেজুরি সমুদ্র সৈকত(Khejuri Sea Beach) পর্যটকদের কাছে একটি নতুন ডেস্টিনেশন হিসাবে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। দু-একদিনের জন্য ঘুরে আসার জন্য এই জায়গাটি একেবারেই উপযুক্ত। নির্জন সমুদ্র সৈকতের মুগ্ধতার পাশাপাশি উপরি পাওনা হিসেবে পেয়ে যাবেন ইতিহাসের নানান কাহিনী। এমনই সুন্দর জায়গা হল পূর্ব মেদিনীপুরের এই নতুন ডেস্টিনেশন। দীঘা, মন্দারমনি, শংকরপুর এই জায়গাগুলোর ভিড় এড়িয়ে ঘুরে আসতে পারেন খেজুরি থেকে।

এই মুহূর্তে আমাদের রাজ্যে সবথেকে জনপ্রিয় এবং জনবহুল পর্যটন কেন্দ্র হলো দিঘা। বছরের সবসময় এই জায়গাতে প্রচুর মানুষের ভিড় থাকে। এর পাশাপাশি মন্দারমনি, শংকরপুর, তাজপুর তো আছে। আর শীতের সময় এই জায়গাগুলোর ভিড় আরো বেশি থাকে। তাই এই সময়ে প্রাচীন ঐতিহ্য সমৃদ্ধ এক সমুদ্র সৈকতে ঘুরে বেড়াতে পারলে আপনার মন আরও বেশি ভালো থাকবে। এটি ভারতের প্রথম ডাকঘর রাজা রামমোহন রায়, প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত জায়গা। ইতিহাস অনুযায়ী এই খেজুরি হলো প্রাচীনকালের উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রথম সমুদ্র বন্দর।

আরও পড়ুন: বাংলার সুইজারল্যান্ড! কলকাতা থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে ঘুরে আসুন এই পাহাড়ি গ্রাম

এখানে ডাচ অলন্দাজ ও পর্তুগিজ বণিকেরা বহু সময় ধরে ব্যবসা-বাণিজ্য করে আসছিল। এখানে একটি ধারে কাছে জায়গার নাম হিজলি। এখানে ১৫১৪ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগিজ নাবিকদের জাহাজ এসে পৌঁছায়। আবার ১৬৭২ খ্রিস্টাব্দে ক্যাপ্টেন জেমস ম্যানেজার নেতৃত্বে রেবেকা নামক একটি পালতোলা জাহাজ খেজুরি বন্দরে আসে। তখন এই জায়গার নাম ছিল কেডিগিরি। এরপর প্রায় ১০০ বছর পরে ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজরা খেজুরি বন্দর গড়ে তোলে। সে সময় লবণ, নীল প্রথা ও দাসপ্রথার জন্য মানুষ কেনা বেচার জায়গা হিসেবে এই খেজুরি বন্দরের নাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।

সেই সময় ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ বণিকদের ইন্ডিয়া কোম্পানির খবর আদান-প্রদানের জন্য এই খেজুরিতেই প্রথম ডাকঘর স্থাপন করা হয়। যেটি ভারতের প্রথম ডাকঘর হিসেবে পরিচিত। ১৮৩০ সালের ১৯শে নভেম্বর রাজা রামমোহন রায় এই ডাকঘরেই রাত কাটিয়েছিলেন। এমনকি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮৪২ ও ১৮৪৫ সালে খেজুরি বন্দর দিয়ে বিদেশে যাত্রা করেছিলেন। এ তো গেল ইতিহাসের কাহিনী, এখানে এলে আপনি হুগলি নদীর মোহনা দেখতে পাবেন। এর পাশাপাশি পাবেন হিজলি শরীফ, আর প্রাচীন ঘরের ধ্বংসাবশেষ। সঙ্গে রয়েছে প্রাচীন লাইট হাউস।

আরও পড়ুন: মিলবে পাহাড়, নদী, জঙ্গল! অল্প বাজেটের মধ্যেই বেড়িয়ে আসুন এই ৪ টি অজানা লোকেশনে

এছাড়া এখানে পেয়ে যাবেন বঙ্কিমচন্দ্রের কপালকুণ্ডলা মন্দির। এর পাশাপাশি সমুদ্র সৈকত তো আছেই। এখানে শীতকালে এলে বেশ কিছু পরিযায়ী পাখিও দেখতে পাবেন। ভারতের বৃহত্তম মৎস্য বন্দর দেশপ্রাণ মৎস্য বন্দর এখানেই অবস্থিত।
কিভাবে আসবেন?
কলকাতা থেকে খেজুরির দূরত্ব ছিল মাত্র ১৩০ কিলোমিটার। কলকাতায় বা হাওড়া থেকে বাসে করে এখানে আসা যায়। দীঘা- হাওড়া রেল লাইনে, লোকাল ট্রেনে হেঁড়িয়া স্টেশনে নেমে বাস ধরে খেজুরী আসা যায়। এখানে থাকার জন্য একাধিক বেসরকারি লজ এবং হোটেল রয়েছে। নিজের পরিবারের সঙ্গে কিংবা প্রিয় মানুষের সঙ্গে একান্তে নিরিবিলিতে সময় কাটাতে চান এবং সঙ্গে সমুদ্রকে চান তাহলে এই জায়গায় অবশ্যই ঘুরে আসতে পারেন।

Papiya Paul

X