ইলেকট্রিক যানবাহন এখন ভারতের পরিবহন ব্যবস্থায় বিপ্লব আনার পথে। কেন্দ্র সরকার সম্প্রতি ইলেকট্রিক যানবাহনের (Electric Vehicles) ব্যবহার বাড়াতে ও ক্রয়কে উৎসাহিত করতে নতুন সাবসিডির ঘোষণা করেছে। এর ফলে ইলেকট্রিক গাড়ির ক্রেতারা যেমন সরাসরি উপকৃত হবেন, তেমনি ইলেকট্রিক স্কুটির (Electric Scooty) জনপ্রিয়তাও বাড়বে। কোন গাড়িতে কত টাকার ছাড় পাওয়া যেতে পারে? কিভাবে ছাড় পাবেন? সেটাই জানানো হল আজকের প্রতিবেদনে।
প্রধানমন্ত্রী ই-ড্রাইভ প্রকল্প: নতুন যুগের ইলেকট্রিক গাড়ি ব্যবস্থা
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, ১ অক্টোবর ২০২৪ থেকে প্রধানমন্ত্রী ই-ড্রাইভ (PM E-Drive) প্রকল্প শুরু হচ্ছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ইলেকট্রিক টু-হুইলারগুলির জন্য বিশেষ ভর্তুকি দেওয়া হবে, যা ২০২৬ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। যে কোনো ইলেকট্রিক যানবাহনের কেনাকাটায় এই ভর্তুকি পাওয়া যাবে। এর ফলে ইভি (EV) শিল্পের দ্রুত প্রসার ঘটাবে এবং ব্যাটারি ভিত্তিক যানবাহনের ক্রয় ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এমনকি ইলেকট্রিক টু-হুইলার ছাড়াও ইলেকট্রিক ট্রাকের ক্রয়কে উৎসাহিত করতে সরকার ৫০০ কোটি টাকার একটি বিশেষ বরাদ্দ করেছে। এটি পরিবহন ব্যবস্থায় আরও পরিবেশবান্ধব বিকল্পের প্রসারে সাহায্য করবে।
কীভাবে সাবসিডি পাবেন?
ইলেকট্রিক স্কুটির ব্যাটারি ক্ষমতার ভিত্তিতে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা (kWh) এর হিসাবে ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত ভর্তুকি দেওয়া হবে। যদিও প্রথম বছরে সর্বাধিক ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত সুবিধা পাওয়া যাবে। দ্বিতীয় বছরে এই ভর্তুকি অর্ধেক হয়ে ২,৫০০ টাকা প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা হবে এবং সর্বাধিক ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত সাবসিডি মিলবে। ভারতের বাজারে থাকা OLA, TVS, Ather, Hero এবং Bajaj এর মতো জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের ইলেকট্রিক স্কুটিগুলির ব্যাটারি ক্ষমতা ২.৮৮ থেকে ৪ কিলোওয়াট ঘণ্টার মধ্যে থাকে। এগুলির দাম ৯০,০০০ থেকে ১.৫ লক্ষ টাকার মধ্যে, তাই এই ভর্তুকি ক্রেতাদের জন্য বড় সুবিধা আনবে।
ভর্তুকি পেতে সহজ উপায়: মোবাইল অ্যাপ
সরকার ই-ড্রাইভ প্রকল্পের আওতায় সাবসিডি পাওয়ার প্রক্রিয়াটি আরও সহজ করতে একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করা হয়েছে। এই অ্যাপের মাধ্যমে সহজেই ই-ভাউচার তৈরি করা যাবে। যেটা ইলেকট্রিক স্কুটি কেনার পরই চালু হয়ে যাবে। আর খেয়াল রাখবেন একটি আধার কার্ডের মাধ্যমে শুধুমাত্র একটি গাড়ির জন্য এই ভর্তুকি পাওয়া যাবে।
চার্জিং স্টেশন স্থাপনে জোর
এই প্রকল্পে ইলেকট্রিক যানবাহনের জন্য পাবলিক চার্জিং স্টেশন (EVPCS) গড়ে তোলার উপরও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নির্বাচিত শহরগুলিতে এবং ইলেকট্রিক যানবাহন চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ রুটগুলিতে এই চার্জিং স্টেশনগুলি স্থাপন করা হবে, যা ইলেকট্রিক গাড়ির মালিকদের চার্জিং সম্পর্কিত সমস্যাগুলি দূর করতে সাহায্য করবে। একইসাথে চার্জিং স্টেশনের নেটওয়ার্ক যত ভালো হবে ততই ইলেকট্রিক যানবাহনের গ্রহণযোগ্যতাও আরও বাড়বে।
ইলেকট্রিক যানবাহনের ভবিষ্যৎ
সরকারের এই নতুন পদক্ষেপ ইলেকট্রিক যানবাহনের ক্ষেত্রে বড়ো পরিবর্তন আনার সম্ভাবনা রাখে। ক্রেতারা যেমন ইলেকট্রিক স্কুটি কেনায় সরাসরি আর্থিক সুবিধা পাবেন, তেমনি চার্জিং পরিকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে ভবিষ্যতে আরও বেশি মানুষ ইভি ব্যবহার করতে আগ্রহী হবেন। এভাবে ইলেকট্রিক যানবাহন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠবে, যা পরিবেশ সংরক্ষণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন উভয় ক্ষেত্রেই ভালো।