বাংলা ভাষাকে মর্যাদা পাইয়ে দেওয়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সরব ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অবশেষে বাংলাভাষীদের জন্য এলো সেই কাঙ্ক্ষিত সুখবর। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আরও উজ্জ্বল করেছে এবং আপামোর বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে উৎসাহের সঞ্চার করেছে।
মোদীর অভিনন্দন বার্তা
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক্স হ্যান্ডলে (প্রাক্তন টুইটার) খাঁটি বাংলায় শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিশ্বের সমস্ত বাংলা ভাষাভাষী মানুষকে। দুর্গাপূজার প্রাক্কালে এই বিশেষ ঘোষণার মাধ্যমে তিনি বলেন, “আমি অত্যন্ত খুশি যে মহান বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। তাও আবার দুর্গাপুজোর সময়ে। বাংলা সাহিত্য অসংখ্য মানুষকে বছরের পর বছর ধরে অনুপ্রাণিত করেছে। এই উপলক্ষে বিশ্বজুড়ে সকল বাংলা ভাষাভাষীকে অভিনন্দন জানাই।” মোদীর এই বার্তা বাংলার সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষদের মন ছুঁয়ে গেছে। বাংলা ভাষার ওপর প্রধানমন্ত্রী যে গুরুত্বারোপ করেছেন, তা নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির জন্য একটি গর্বের বিষয়।
আমি অত্যন্ত খুশি যে মহান বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে আর তাও পবিত্র দুর্গা পূজার সময়েই।বাংলা সাহিত্য অসংখ্য মানুষকে বছরের পর বছর ধরে অনুপ্রাণিত করে আসছে । এই উপলক্ষে বিশ্ব জুড়ে সকল বাংলা ভাষাভাষী-কে অভিনন্দন জানাই ।
— Narendra Modi (@narendramodi) October 3, 2024
অন্য ভাষার স্বীকৃতি
বাংলা ছাড়াও মোদী সরকার মারাঠি, অহমিয়া, পালি, প্রাকৃত ভাষাগুলিকে ইতিমধ্যেই ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি দিয়েছে। এর আগে তামিল, সংস্কৃত, তেলুগু, কানাড়া, মালয়ালম ও ওড়িয়া ভাষাকে এই মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল কেন্দ্রের তরফ থেকে। তবে এবার বাংলাকে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্তকরণ, মোদী সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। বাংলার সাহিত্যিক ঐতিহ্য এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতির ওপর ভিত্তি করেই এই স্বীকৃতি এসেছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
মমতার প্রতিক্রিয়া
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই কেন্দ্রীয় স্বীকৃতিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “আমরা বহুদিন ধরে এই স্বীকৃতির জন্য লড়াই করে এসেছি। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রককে আমরা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাপত্র জমা দিয়েছিলাম, যা আজকের এই অর্জনের ভিত্তি। অবশেষে আমাদের বাংলা দেশের অন্যতম প্রাচীনতম ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেল।”
আমি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমাদের দীর্ঘ লড়াইয়ের পর আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে ভারত সরকার একটি ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দিয়েছে।
অনেকদিন ধরে আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রকের কাছে এই সংক্রান্ত গবেষণালব্ধ বিপুল তথ্য জমা দিয়ে দাবি করছিলাম যাতে বাংলা ভাষাকে এই…
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) October 3, 2024
রাজনৈতিক বিশ্লেষণের প্রেক্ষাপট
এটি শুধু বাংলাভাষীদের জন্য নয়, বরং দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে বাংলা ভাষার প্রতি মোদী সরকারের সমর্থন ও ভারতের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধা আরও সুস্পষ্ট হয়েছে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখেই এই পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্র। ভোটে আসন সংখ্যা বাড়াতে বাঙালিকে কাছে টানতে বাংলাকে ধ্রুপদী ভাষার এই স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।