অনেক সময় মানুষের এমন কিছু জীবন কাহিনী শোনা যায় যা সত্যি মনের মধ্যে অনুপ্রেরণা যোগায় .আজকের এই প্রতিবেদনে এমনই একজন ব্যক্তির সম্পর্কে আপনাদেরকে জানাবো। এই ব্যক্তির নাম রাজ সিং প্যাটেল। তিনি উত্তরপ্রদেশের উন্নাওতে শিবপুর নামের একটি ছোট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার বাবা সুন্দরলাল প্যাটেল ছিলেন একজন কৃষক। পাঁচ ছেলে ও এক মেয়েকে লালন পালন করা খুব কষ্টের হয়ে দাঁড়িয়েছিল এই কৃষকের।
তবুও তিনি কষ্ট করেও ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করার জন্য স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলেন। কিন্তু রাজ সিংয়ের ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় মন ছিল না। তবুও দশম শ্রেণী পর্যন্ত তিনি স্কুলে যান। দশম শ্রেণীর রেজাল্টে রাজ ফেল করেছিলেন। এরফলে তার বাবা খুব বকাঝকা করলে হতাশ হয়ে রাজ বাড়ী থেকে পালিয়ে যায়। এরপর হরিয়ানাতে গিয়ে এক প্রতিবেশীর সাহায্যে একে কাজের সন্ধান করেন। ১৯৮৮ সালে একটি কোম্পানিতে লেদ মেশিনের কাজ শুরু করেছিলেন তিনি।
সারাদিন কাজ করার পর তিনি প্রচন্ড ক্লান্ত হয়ে পড়তেন। বহুবার তাকে রাস্তায় রাত কাটাতে হয়েছে। এমনকি খাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত টাকাও ছিল না তার কাছে। এরপর একটি কোম্পানিতে চাকরি পাওয়ার পর প্রচুর খেটে টাকা জমাতে শুরু করেন তিনি। কারণ তার একটা উদ্দ্যেশ্য ছিল নিজের ব্যবসা শুরু করবেন। নাট এন্ড বোল্ট কোম্পানিতে টানা ৯ বছর কাজ করার পর সাহস দেখিয়ে ৭৫ হাজার টাকায় ঋণ নিয়ে একটি মেশিন ভাড়া নেন তিনি।
এই মেশিনে নাট-বোল্ট তৈরি করতে শুরু করেন তিনি। রাজেশ স্ত্রীও তাকেই কাজে সাহায্য করেছিলেন। দুজনে মিলেই সুন্দরভাবে কাজ শুরু করেন যা পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে বেশ ভালো চলতে থাকে। এরপর তিনি ১৯৯৯ সালে নিজের মেশিন কিনে একটি কারখানা চালু করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বিভিন্ন দেশে ঘুরে কিভাবে মেশিন তৈরি করা হয় এবং কাজ করা হয় সমস্ত কিছু শিখে নেন। এরপর নিজেই মেশিন তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন।
এরপর তিনি নিজেই কঠোর পরিশ্রম এবং অভিজ্ঞতার জোরে একটি স্বয়ংক্রিয় মেশিন তৈরি করেন যা তৈরি করতে তার খরচ হয়েছিল সাড়ে তিন লাখ টাকা। এ মেশিনটি একঘন্টাতে অনেকগুলো নাট-বোল্ট তৈরি করতে পারে। এরপর যখন তিনি ব্যবসা করে প্রতিষ্ঠিত হন তখন নিজের গ্রামে ফিরে গিয়ে তার এই সাফল্যের জন্য পিতামাতা এবং ভগবানকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানান।
গ্রামের ছেলেরা যদি কেউ কাজ শিখতে চায় তাদেরকেও নিজের কোম্পানিতে কাজের সুযোগ দেন রাজ সিং। তিনি মনে করেন তিনি যদি সরকারের কাছ থেকে এ বিষয়ে সাহায্য পান। তাহলে আরো অনেক মেশিন তিনি তৈরি করতে পারবেন। যা কম সময়ে বেশি উৎপাদন দিতে পারবে।