রাজার ছেলে রাজা হয় আর শ্রমিকের ছেলে শ্রমিক, এই প্রবাদটি নিশ্চয়ই কোনো না কোনো সময়ে শুনে থাকবেন। কিন্তু এখন আর সেই যুগ নেই। এখন যোগ্যতাবলে সবাই নিজের নিজের জায়গা ছিনিয়ে নিতে বিশ্বাসী। সম্প্রতি এর সর্বোত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছেন সুরজ কুমার বেহেরা , যিনি চা বিক্রি করে NEET পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।
সুরাজ কুমার বেহেরা, যিনি ওডিশার কান্ধমাল জেলার ফুলবনি গ্রামের বাসিন্দা, সম্প্রতি ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি অ্যান্ড এন্ট্রান্স টেস্ট (NEET) পাস করে সবাইকার তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। পরিবারের কথা বললে, সুরজের বাবা শিবা শঙ্কর বেহেরা পেশায় একজন চা বিক্রেতা। তিনি স্থানীয় হাসপাতালের বাইরে চা বিক্রি করে দিন গুজরান করেন আর সুরজ তাকে তার কাজে সাহায্য করে।
শিবা শঙ্কর চেয়েছিলেন তার ছেলে একজন বড়ো ডাক্তার হোক, কিন্তু তার আর্থিক অবস্থা এতটা ভালো নয় যে সে NEET পরীক্ষার জন্য কোনো কোচিং সেন্টারে মোটা ফি জমা দিতে পারে। এমতাবস্থায় বাবার মনের দুশ্চিন্তা বুঝতে পেরে কোচিং ক্লাসে না গিয়ে বাড়িতেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন সুরজ।
আর ফলস্বরূপ সুরজ বেহেরা মেডিকেল এন্ট্রান্স পরীক্ষায় ৭২০ এর মধ্যে ৬৩৫ নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। সুরজের সর্বভারতীয় র্্যাঙ্ক হলো ৮,০৫৬। তবে সুরজ অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত হলেও তার কাছে সংরক্ষণের কোনো শংসাপত্র না থাকায় কোনো ফি বা পদে অতিরিক্ত শিথিলতার সুবিধা পাননি।
সুরজ কুমারের কথায় জানা গেছে যে, পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ইউটিউবের সাহায্য নিয়েছিলেন তিনি। তিনি যখন তার বাবার সাথে কাজ করতেন তখন ডাক্তাররা সেখানে চা খেতে আসতেন সেইসময় সুরজ তাদের সাথে পড়াশোনা নিয়ে আলোচনা করতেন। এরপরই মেডিক্যাল পড়ার কথা মাথায় আসে তার। এরপরই ইউটিউবের সাহায্যে প্রস্ততি শুরু করে দেন তিনি।
তবে প্রথম প্রয়াসেই যে সুরজ সফলতা পেয়েছিল তা নয়। এবারের NEET পরীক্ষায় পাশ করার আগে তিনি ৫ বার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তখন সফল হতে পারেননি। কিন্তু হাল না ছেড়ে তিনি ষষ্ঠবার আবার চেষ্টা করেন এবং অবশেষে কাঙ্খিত সাফল্য এসে ধরা দেয় তার কাছে। সুরজ যে আজ দেশের লাখো মানুষের অনুপ্রেরণা তা বলাই বাহুল্য।