কবিগুরুর লেখা ‘আমি তোমারও বিরহে রহিব বিলীন, তোমাতে করিব বাস’ এই গানটি হয়তো সকলেই শুনেছেন। কিছুটা এরকমই ছিল ঐন্দ্রিলা-সব্যসাচীর প্রেম কাহিনী। খুব অল্প সময়ের জন্য ঘর বেঁধেছিলেন তারা। আর ঐ অল্প সময়েই গড়ে দিলেন ইতিহাস। হয়তো ভবিষ্যতে কখনো ভালোবাসার উদাহরণ দিলে ‘রোমিও-জুলিয়েট’র পাশাপাশি এই দুটি নামও উচ্চারিত হবে মানুষের মুখে।
‘ঐন্দ্রিলা’, সব্যসাচীর আদরের ‘মিষ্টি’। যাকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। মনে ছিল হাজারো পরিকল্পনা। একবার এক সাক্ষাৎকারে ‘র্যাপিড ফায়ার’ পর্বে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘ঐন্দ্রিলা বলতেই আপনার প্রথম কোন শব্দ মাথায় আসে?’ একগাল হাসি নিয়ে সব্যসাচীর উত্তর ছিল, “আমার।” আর আজ সব ব্যর্থ করে চিরকালের মত বিদায় নিলেন অভিনেত্রী।
তবে মানুষের নশ্বর দেহটা বিলীন হলেই তো আর সব ভাবনা শেষ হয়ে যায়না। কারণ অনুভূতিরা বাঁচে স্মৃতিতে। আর সেই স্মৃতি দেখে বাঁচে আরো কত শত প্রেম। ২০১৭ সালে যে রূপকথার শুরু হয়েছিল তার অকাল ছন্দপতন ঘটেছে বটে, কিন্তু এই কাহিনী ভোলার নয়। সাল ২০১৭ তে ঐন্দ্রিলার প্রথম সিরিয়াল ‘ঝুমুর’-র সেটে হয় এর সূচনা।
যদিও তাদের প্রেম ‘লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট’ ছিলনা। জহুরীর চোখ নিয়ে রীতিমত যাচাই করেই রত্ন বেছেছিলেন অভিনেত্রী। দুই তারকার ফোনালাপ যে কবে প্রেমালাপে বদলে গেল তা বুঝতেই পারেনি কেউ। শুরু হয় একসাথে পথচলা। আর ঠিক তারপরেই আসে নতুন ধাক্কা। সাল ২০২১-এ জন্মদিনের দিন দশেকের মাথায় ঐন্দ্রিলা জানতে পারে ফুসফুসে বাসা বেঁধেছে টিউমার।
তারপরের লড়াইয়ের কথা তো সবাই জানেন। তারা দেখিয়েছে কীভাবে ভালোবাসার মানুষের পাশে থাকতে হয়। দিল্লির হাসপাতালে বসে ঐন্দ্রিলা যখন তার দ্বিতীয়বার ক্যান্সার আক্রমণের খবর পান, সব্যসাচী তখন ব্যস্ত ‘সাধক বামাখ্যাপার শুটিংয়ে’। ঐন্দ্রিলা যখন হাল ছেড়ে দিয়েছেন, সব্যসাচী তখন জুগিয়েছেন লড়াই করার সাহস।
গত ৩১ অক্টোবর সব্যসাচীর জন্য শেষ লেখা লিখেছিলেন ঐন্দ্রিলা— “আমার বেঁচে থাকার কারণ।” আর এদিকে অভিনেতার গোটা পৃথিবীটাই তো ছিলেন তিনি। ১ লা নভেম্বর ঐন্দ্রিলাকে হাসপাতালে আনার সময় জোর গলায় বলেছিলেন, ‘নিজে হাতে নিয়ে এসেছিলাম। নিজে হাতেই ওকে ফিরিয়ে নিয়ে যাব।’ ডাক্তাররা হাল ছেড়ে দিলেও তিনি বিশ্বাস হারাননি। কিন্তু বিধাতার ইচ্ছে বোধহয় অন্য কিছুই ছিল। আর তাই সব্যসাচীকে একা রেখে অভিনেত্রী পাড়ি দিলেন এক নতুন দেশে।