নিউজ শর্ট ডেস্ক: ‘লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন (Gouri Sen)‘। ছোট থেকে কমবেশি আমরা সকলেই শুনেছি জনপ্রিয় এই প্রবাদ বাক্য। কিন্তু প্রশ্ন হল আসলে কে এই গৌরী সেন? এই নামে সত্যিই কি কেউ ছিলেন? নাকি এই গৌরী সেন শুধুমাত্র কাল্পনিক চরিত্র। আসলে তা নয় গৌরী সেন সত্যিই ছিলেন। আর তিনি ছিলেন সতেরশ শতকের একজন বাঙালি ব্যবসায়ী। আসলে তার জন্মই হয়েছিল এক সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী পরিবারে। তাই তাঁর রক্তেই ছিল ব্যবসা।
তখনকার দিনের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বাঙালি ব্যবসায়ী নন্দরাম সেনের পুত্র ছিলেন তিনি। কিন্তু অনেকেই জানেন না এই গৌরী সেনের উত্তরসূরীরাই আত্মঘাতী হয়েছিলেন দেনার দায়ে। আমদানি রপ্তানির পারিবারিক ব্যবসা ছিল তাঁদের। বড় হয়ে তিনিও সেই ব্যবসায় যোগ দিয়েছিলেন। নিজের ব্যবসায়িক বুদ্ধির জোরেই খুব অল্প সময়ের মধ্যে সেই ব্যবসাকে এক আলাদা উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেনগৌরী সেন।
আরও পড়ুন: টাকার চিন্তা ছাড়ুন! বিদেশের এই জায়গায় গেলে আপনিই পাবেন টাকা, থাকতে পারবেন ফ্রীতে
তবে বরাবরই খুবই হাসি খুশি প্রাণ খোলা মনের মানুষ ছিলেন তিনি। নিজের প্রতিভার জোরে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও নিজের নামডাক করে ফেলেন তিনি। পরবর্তীতে কলকাতায় এসে ৩৫ ও ৩৬ নম্বর কালুটোলা স্ট্রিটে নিজের একটি বাসভব স্থাপন করেছিলেন গৌরী সেন। শুরুর দিকে কলকাতায় এসে বৈশবচরণ শেঠের সাথে যৌথভাবে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। তারা দুজনেই ছিলেন খুবই সৎ উদার এবং ধার্মিক মানুষ। তাই বরাবরই দুহাত ভরে অভাবীদের দান করতেন।
এইভাবেই নিজের দানশীল স্বভাবের জন্যই ব্যবসায়ী থেকে গৌরী সেন হয়ে উঠলেন একজন উদার সমাজসেবী। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বৈশবচরণ শেঠের। একবার ৭ জাহাজ ভরা দস্তা কিনতে গিয়ে বৈশবচরণ তা কিনেছিলেন গৌরী সেনের নামে। পরে দেখা যায় জাহাজগুলিতে দস্তার পরিবর্তে রয়েছে রুপো। যেহেতু জাহাজ গুলো তিনি গৌরী সেনের নামে কিনেছিলেন তাই লাভের টাকা গৌরী সেনকেই দিয়েছিলেন বৈশবচরণ। রাতারাতি এই ঘটনা ভাগ্য বদলে দেয় গৌরী সেনের।
বিপুল অর্থের মালিক হয়ে যান তিনি। তারপরই তিনি শুরু করেন নিজের স্বাধীন ব্যবসা। প্রতি ক্ষেত্রেই সফল হয়েছিলেন তিনি। তবে ব্যবসায়িক উন্নতির পাশাপাশি তিনি করে চলেছিলেন দান ধানের কাজকর্ম-ও।বহু অসহায় মানুষকে ঋণ মুক্ত করেছেন তিনি। তাঁর কাছে সাহায্য চাইতে এসে কেউ কোনোদিন খালি ফেরেননি। তাঁর এই স্বভাব তাকে গোটা কলকাতায় ব্যাপক পরিচিতি দেয়।
কিন্তু কিন্তু ভাগ্যের এমনই পরিহাস এই দাতা গৌরী সেনের পরিবারের দুই ভাইকেই পরবর্তীকালে ঋণের দায় আত্মঘাতী হয়েছিল। সেন পরিবারের তিন ভাই দিলীপ, অসীম এবং বিমল সেন। তাঁরা বেকারি বিস্কুটের ব্যবসা শুরু করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছিলেন। নয়ের দশকে তাদের সেনকো রুটি, দক্ষিণবঙ্গে ব্যাপক ব্যবসা শুরু করেছিল। এই সংস্থা একটি প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডে-ও পরিণত হয়েছিল। কিন্তু শ্রমিক অসন্তোষের কারণে একদিন সর্বহারা হয়ে যান। বিশাল ঋণের বোঝা শোধ করতে না পেরে আত্মহত্যা করেন অসীম এবং বিমল।