পৃথিবী এবং চাঁদের সম্পর্ক যুগ যুগ ধরে বিজ্ঞানীদের আকর্ষণ করেছে। এবার সেই সম্পর্ককে আরও রোমাঞ্চকর করতে একটি নতুন উপগ্রহ যোগ হয়েছে। ইসরো (ISRO) জানিয়েছে, ‘পিটি-৫ ২০২৪’ নামের একটি ছোট্ট গ্রহাণু আসছে পৃথিবীর কক্ষপথে মাত্র ৫৩ দিনের জন্য। এটি চাঁদের সঙ্গী হয়ে কিছু সময় পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করবে। গ্রহাণুটির আকার মাত্র ১০ মিটার, যা চাঁদের তুলনায় প্রায় ৩.৫ লক্ষ গুণ ছোট।
পিটি-৫ ২০২৪: কীভাবে এল?
‘পিটি-৫ ২০২৪’ আসলে একটি গ্রহাণু, কোনো কৃত্রিম উপগ্রহ নয়। বিজ্ঞানীরা প্রথম এটির সন্ধান পান অগস্ট মাসে। কার্লোস মার্কোস এবং রাউল মার্কোস নামে দুই বিজ্ঞানী মহাকাশে এই গ্রহাণুর উপস্থিতি শনাক্ত করেন। এটি পৃথিবীর কক্ষপথে প্রবেশ করেছে অশ্বক্ষুরাকার কক্ষপথের মাধ্যমে, যা সাধারণত নিয়ার আর্থ অবজেক্টস (NEO) এর ক্ষেত্রে ঘটে। অতীতে, ১৯৯৭, ২০১৩ এবং ২০১৮ সালে পৃথিবীর কক্ষপথে এমন ক্ষণস্থায়ী উপগ্রহ এসেছে।
অর্জুন গোত্রের গ্রহাণু
বিজ্ঞানের ভিত্তিতে গ্রহাণু মূলত পাঁচটি প্রধান গোষ্ঠীতে বিভক্ত, অর্জুন, অ্যাপোলো, অ্যাটেন, আমোর এবং অ্যাটিরা। পিটি-৫ ২০২৪ অর্জুন গোষ্ঠীর অন্তর্গত। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন (IAU) এই গ্রহাণুটির নামকরণ করেছে। ইসরোর নেটওয়ার্ক ফর স্পেস অবজেক্ট ট্র্যাকিং অ্যান্ড অ্যানালিসিস (নেত্রা) এর প্রধান অনিল কুমার বলেছেন যে এটি অর্জুন গোষ্ঠীর একটি দলছুট গ্রহাণু, যা এখন চাঁদের সঙ্গী হিসেবে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করবে।
এই গ্রহাণুটির পৃথিবীর কক্ষপথে অবস্থান খুবই ক্ষণস্থায়ী। মাত্র ৫৩ দিন পর এটি তার কর্মজীবন শেষ করবে এবং মহাজগতের অন্য কোনও অংশে হারিয়ে যাবে। যদিও এটি খালি চোখে দেখা সম্ভব নয়, বিশেষ টেলিস্কোপের সাহায্যে এটি দেখা যাবে। তবে বিজ্ঞানীদের এই ছোট্ট গ্রহাণু নিয়ে উৎসাহের অন্ত নেই।
চাঁদ ও পৃথিবীর সম্পর্ক
চাঁদ হলো পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ, যা আমাদের গ্রহের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করে এসেছে যুগের পর যুগ ধরে। এবার, অল্প সময়ের জন্য হলেও, পৃথিবীর চারপাশে চাঁদের সঙ্গে নতুন এই উপগ্রহ ঘুরে বেড়াবে। এমন ঘটনা পৃথিবী ও মহাকাশের সম্পর্ককে আরও স্পেশাল করে তুলেছে।
প্রসঙ্গত, পিটি-৫ ২০২৪ এর এই ক্ষণস্থায়ী সফর মহাকাশ গবেষণার জগতে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এনেছে। পৃথিবী ও চাঁদের সম্পর্কের এই রোমাঞ্চকর অধ্যায় আমাদের মহাকাশ গবেষণা আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। পৃথিবী এবং চাঁদ, দুইয়েরই গুরুত্ব বিজ্ঞানের জগতে অপরিসীম, এবং নতুন এই উপগ্রহ সেই সম্পর্ককে বিজ্ঞানী তথা সকলের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে।