পশ্চিমবঙ্গ সরকার বিভিন্ন ধরনের সমাজকল্যাণমূলক প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের মানুষকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে চলেছে। এ ধরনের প্রকল্পগুলো বিশেষত গ্রামীণ জনগোষ্ঠী এবং অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। আজকের আলোচনায় থাকবে দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প – “কৃষক ভাতা” (Krishak Bhata) ও “লক্ষীর ভান্ডার” (Laxmir Bhandar)।
কৃষক ভাতা: রাজ্যের কৃষকদের জন্য আর্থিক সহায়তা
ভারতবর্ষ একটি কৃষিপ্রধান দেশ, এবং পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার একটা বড় অংশের মানুষ কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল। কৃষিকাজের মাধ্যমে তাঁরা জীবিকা নির্বাহ করেন, কিন্তু প্রায়শই তাঁরা আর্থিক সঙ্কটে পড়েন। তাই পশ্চিমবঙ্গ সরকার চালু করেছে “কৃষক ভাতা” প্রকল্প। এই প্রকল্পের আওতায়, রাজ্যের বয়স্ক কৃষকদের মাসে ১০০০ টাকা ভাতা প্রদান করা হয়। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হলো, আর্থিকভাবে দুর্বল কৃষকদের পাশে দাঁড়ানো এবং তাঁদের সংসার চালাতে সহায়তা করা।
কৃষক ভাতা প্রকল্পে যোগ্যতা ও আবেদন প্রক্রিয়া
কৃষক ভাতা প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে হলে কৃষকদের কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হবে। আবেদনকারীদের অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে, এবং তাঁদের বয়স ৬০ বছরের বেশি হতে হবে (তফশিলি জাতি ও উপজাতি শ্রেণির জন্য ৫৫ বছর বয়স)। এছাড়াও, আবেদনকারীর নামে সর্বাধিক ১ একর জমি থাকতে হবে। ভূমিহীন কৃষকরাও এই প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে পারেন।
আবেদনকারীরা অনলাইনে বা অফলাইনে আবেদনপত্র পূরণ করতে পারেন এবং তা জমা দিতে হবে স্থানীয় ব্লক কৃষি অধিকর্তার অফিসে। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময় কিছু নথিপত্র জমা দিতে হবে, যেমন – আধার কার্ড, রেশন কার্ড, জমির মালিকানার প্রমাণপত্র, ব্যাংকের পাসবই ও চালু মোবাইল নম্বর।
লক্ষীর ভান্ডার: নারীদের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রকল্প
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আরেকটি উল্লেখযোগ্য প্রকল্প হলো “লক্ষীর ভান্ডার” (Laxmir Bhandar), যা রাজ্যের মহিলাদের আর্থিক সুরক্ষার দিকে নজর রেখে চালু করা হয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে, সাধারণ শ্রেণির মহিলারা প্রতি মাসে ১০০০ টাকা এবং তফশিলি জাতি ও উপজাতি শ্রেণির মহিলারা প্রতি মাসে ১২০০ টাকা ভাতা দেওয়া হয়। প্রকল্পটি নারীদের আর্থিক সুরক্ষা প্রদান করে এবং তাঁদের পরিবারের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাহায্য করে। এটিই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রকল্প।
লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পে যোগ্যতা ও আবেদন প্রক্রিয়া
লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পে আবেদন করার জন্য মহিলাদের পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে এবং তাঁদের বয়স ২৫ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হতে হবে। অনলাইনে এবং অফলাইনে উভয়ভাবেই আবেদন করা যায়। আবেদনকারীদের পরিচয়পত্র, আধার কার্ড এবং ব্যাংকের পাসবই জমা দিতে হয়। তবে সবচেয়ে সহজ হল দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পের মাধ্যমে আবেদন করা।
কৃষক ভাতা এবং লক্ষীর ভান্ডার: দুটি প্রকল্পের গুরুত্ব
রাজ্য সরকারের কৃষক ভাতা ও লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্প দুটি সমাজের দুই গুরুত্বপূর্ণ শ্রেণিকে আর্থিক সুরক্ষা প্রদান করছে। কৃষক ভাতা প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকরা তাঁদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে সক্ষম হচ্ছেন, আর লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পটি মহিলাদের আর্থিক স্বাবলম্বী করে তুলছে। এই দুই প্রকল্পই রাজ্যের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় বড় ভূমিকা পালন করছে।