আয়না এমন একটা জিনিস যা প্রতিটি বাড়িতেই থাকে। বিশেষ করে মহিলারা তো আয়না ছাড়া থাকতেই পারেননা। মেকাপ হোক কি হেয়ারস্টাইল–আয়না থাকা আবশ্যক। এমতাবস্থায় কখনো কি মনে প্রশ্ন জেগেছে যে, এই আয়না এলো কীভাবে? কী এর উৎপত্তির ইতিহাস? তাহলে চলুন আজ জেনে নিই আয়না সম্পর্কিত মজার ইতিহাস, যার সম্পর্কে খুব কম মানুষই জানেন।
এমনটা কিন্তু মোটেও নয় যে, আয়না আবিষ্কারের আগে মানুষ তাদের মুখ দেখতে পেতোনা। সেই সময় মানুষ আয়নার জায়গায় স্বচ্ছ জলের ব্যবহার করতো। কিন্তু জলে নিজের মুখ অতটাও পরিষ্কার দেখা যায়না। আর এই কারণে, ওতে সাজসজ্জা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিলো।
এমতাবস্থায় সাল ১৮৩৫-এ জার্মান রসায়নবিদ জাস্টাস ফন লিবিগের হাত ধরে আবিষ্কার হয় কাঁচ। কাঁচের একটি পাতলা পৃষ্ঠে রূপার একটি পাতলা স্তর লাগিয়ে করে কাঁচ তৈরি করেছিলেন তিনি। এটিই ছিলো আয়না আবিষ্কারের সূত্রপাত। কিন্তু এতেও পুরো সমস্যার সমাধান হলোনা। যেহেতু জাস্টাস ফন লিবিগের আয়না রূপোর পাত দিয়ে তৈরি হত তাই কেবল গুটিকয়েক ধনী ব্যক্তিই সেই আয়না ব্যবহার করতে পারতো।
অবশ্য উৎপত্তির শুরুতে আয়নার আদল বর্তমানের মতো ছিল না। স্বচ্ছ কাঁচের আয়নার ধারণা এসেছে আরও অনেক পরে। নানান পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং পরিবর্তনের পর ১৮৩৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে আয়নার ব্যবহার শুরু হয়। যদিও কথিত আছে যে, এরও প্রায় ৮ হাজার বছর আগে থেকেই মানুষ আয়না ব্যবহার করতে শিখেছিলো। কিন্তু সেইসময় আয়নায় গুলো ছিল বড়ো অদ্ভুত। মুখমণ্ডল পরিষ্কার ও নির্ভুল দেখার পরিবর্তে বেঁকেচুরে যেত।
যাইহোক অবশেষে সাল ১৮৩৫-এ মানুষ এমন একটি আয়না তৈরি করে ফেলে যাতে মুখমণ্ডল স্পষ্ট ও নির্ভুলভাবে দেখা যাচ্ছিল। সেই সময় প্রথম যে ব্যক্তি আয়নায় নিজের মুখ দেখেছিলেন তার নাম ছিল তেবেলে। ইনি মূলত একটি আদিবাসী গোষ্ঠীর মানুষ ছিলেন। এরপর দ্বিতীয় যে ব্যক্তি নিজের মুখ দেখেন তিনি ছিলেন গোষ্ঠীর প্রধান ‘পুয়া’।
যাইহোক, পুয়া আয়নাটিকে তাদের বংশের জন্য বিপজ্জনক মনে করে ফিরিয়ে দেন সেইসময়। এইভাবে শুরু হয় আয়নার সফর। এবং আজ দীর্ঘ সময়ের পর হাজার পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং পরিবর্তনের পর ধনী থেকে দরিদ্র সকল মানুষ আয়না ব্যবহার করতে পারে। জানিয়ে দি যে আয়না যত সহজে ভেঙ্গে যায় তা বানাতে কিন্তু ততটাই বেশি সময় লাগে। তাই পরের বার যখন আপনি আয়নায় আপনার মুখ দেখবেন তখন জাস্টাসকে একটা ধন্যবাদ অবশ্যই জানাবেন।