নিউজশর্ট ডেস্কঃ হাওড়া স্টেশন (Howrah Station), কর্মূসূত্র হোক বা ভ্রমণ বাঙালির অতিপরিচিত রেলওয়ে স্টেশন এটি। দেশের সবচেয়ে ব্যস্ত স্টেশন হল এই হাওড়া স্টেশন, প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ এখান থেকেই নিজের গন্তব্যেরউদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছেন, আর কলকাতায় আসছেন। এবছর ১৭০তম বছরে পা দেবে হাওড়া স্টেশন। তার আগেই এল দারুণ সুখবর।
বাংলার মুকুটে যুক্ত হতে চলেছে নতুন পালক। প্রাচীনত্ব ও ঐত্যিহাসিক গুরুত্বের ভিত্তিতে ইউনিস্কো হেরিটেজ তকমা পেতে চলেছে হাওড়া স্টেশন। যদিও এর প্রস্তুতি বহু আগে ২০১৮ সালেই শুরু হয়ে গিয়েছিল। এরপর করোনা মহামারী আসার কারণে সবটা থমকে গিয়েছিল। তবে এবার হেরিটেজ হিসাবে স্বীকৃতি পাবে হাওড়া রেলওয়ে স্টেশন।
রবীন্দ্রনাথের পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথই ইংল্যান্ডে ট্রেনের চাপার পর দেশে রেলপথের ভাবনা চিন্তা শুরু করেন। রানীগঞ্জ ও রাজমহল পাহাড় এলাকায় খনি ছিল সেখান থেকে দ্রুত কয়লা আনার উপায় খুঁজছিলেন তিনি। রেলপথ শুরুর জন্য এক তৃতীয়াংশ খরচ দেওয়ারও প্রস্তাব দেন ইংরেজদের। কিন্তু সেটা না হওয়ায় নিজেই গ্রেট ওয়েস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি তৈরি করে রেল লাইনের কাজ শুরু করেন। পরবর্তীকালে দ্বারকানাথেরমৃত্যু হলে ওই কোম্পানির সাথে ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ে মার্জ হয়ে কাজ শুরু হয়।
অনেকেই হয়তো জানেন না, দেশের প্রথম রেলগাড়ি ছাড়া হতে পারতো হাওড়া স্টেশন থেকেই। কিন্তু সেই সময় যে ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন চালানো হবে তা কলকাতার বদলে অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছে যায়, তাই সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়। এছাড়া যে জাহাজে ট্রেনের কোচ আনা হচ্ছিল সেটিও হুগলি নদীরমোহনের বালুচরের কাছে ডুবে গিয়েছিল।
আরও পড়ুনঃ রিচার্জের দাম বৃদ্ধির পর বড় পদক্ষেপ, টেলিকম সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে TRAI
এবছরের ফেব্রুয়ারি মাসেই হাওড়া স্টেশনের DMR ভবন ও মূল ভবনকে ইউনেস্কো হেরিটেজ তালিকায় আনার প্রস্তুতি শুরু হয়। রেল বোর্ডের প্রাক্তন অর্থ কমিশনার তথা ‘Railway Enthusiast Soceity’ এর পশ্চিমবঙ্গ ডিভিশনের প্রধান সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় এই মর্মে পূর্ব রেলকে চিঠিও লিখেছেন। তারপরেই হাওড়ার ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার সঞ্জীব কুমার বেশ আগ্রহী এই বিষয়ে। শুরু হয়েছেহাওড়ার ঐতিহাসিক গুরুত্বের খোঁজ।
যেমনটা জানা যাচ্ছে, ১৯০৫ সালে ব্রিটিশ স্থপতি হ্যালসে রিকার্ডোর পরিকল্পনায় তৈরী হয়েছিল বর্তমান হাওড়া স্টেশনের মূল ভবন। সেই সময় মোট ৬টি প্লাটফর্ম ছিল। গোটা ভবনেরোমান ও মুরস্থাপত্যের আদলে বিশাল বারান্দা , বড় বড় খিলান ছিল। অর্ধচন্দ্রাকৃতি ভবনটিরগম্বুজের সাথে মিল ছিল গুম্ফার।
পরবর্তীকালে আরও ৮টি প্ল্যাটফর্ম তৈরী করাহয় ১৯৮৪ সালে। আর নতুন টার্মিনাল উদ্বোধন হয় ১৯৯২ সালে। সব মিলিয়ে বর্তমানে ২৩টি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে হাওড়া স্টেশনে। ১৭০ বছর পুরোনো ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সংমিশ্রনের হাওড়া স্টেশন ইউনেস্কো হেরিটেজ তকমা পেলে সত্যিই সেটা বাঙালির কাছে একটা বড় পাওনা হতে চলেছে।