প্রথম ছবিতেই জাতীয় পুরস্কার। কিন্তু বি টাউনে পা রাখার পর থেকে নানান বিষয়ে কটূ কথা শুনতে হয়েছে তাকে। কখনও গায়ের রং নিয়ে তো কখনও আবার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে। কতরাত যে চোখের জলে বালিশ ভিজেছে তার ইয়াত্তা নেই। তবে এতকিছুতেও হার মানেননি তিনি। মায়নগরীতে রাজ করার স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলেন, সেই স্বপ্নকে যে সত্যি করতেই হত।
বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে তো বটেই, বলিউডেও মিঠুন চক্রবর্তী (Mithun Chakraborty) একজন বিখ্যাত অভিনেতা। সেই ১৯৭৬ সালে ‘মৃগয়া’ ছবি দিয়ে অভিনয় জগতে পথচলা শুরু করেন তিনি। এরপর তার অনবদ্য অভিনয় এবং নজরকাড়া ডান্স স্টেপ মুগ্ধ করে ফেলে আপামর জনগণকে। ৮০’র দশকের শুরুতে মিঠুন হয়ে ওঠেন সুপারস্টার! কিন্তু এহেন স্ট্রাইলের পরেও অভিনেতা চান না তার কোন বায়োপিক তৈরি হোক।
সম্প্রতি ‘সারেগামাপা লিটল চ্যাম্পস’-এর মঞ্চে তিনি আসেন পদ্মিনী কোলাপুরীর সঙ্গে। এ দিন ‘লিটল চ্যাম্পস’-এ ছিল ডিস্কো স্পেশ্যাল পর্ব। সেখানে এসেই ফিরে গেছিলেন নিজের কেরিয়ারের শুরুর দিনগুলিতে। কথা বলতে গিয়ে খানিকটা অভিমানী সুর শোনা গেল মহাগুরুর গলায়। কণ্ঠে ধরা দিল ফেলে আসা দিনগুলোর তরতাজা স্মৃতি।
মিঠুনের কথায়, ‘আমি কখনও চাইব না, আমি যে কষ্টের মধ্যে দিয়ে গিয়েছি, তা অন্য কেউ ভোগ করুক। নিজের গায়ের রঙের জন্য পদে পদে হেনস্থা হতে হয়েছে আমাকে। চূড়ান্ত অসম্মানের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। এমন দিন গিয়েছে যে, খালিপেটে ঘুমোতে হয়েছে। একা একাই কেঁদেছি। এরকমও দিন গেছে যখন আমাকে ভাবতে হয়েছে পরের মিলে আমি আদৌ খাবার পাব তো? এমন অনেক দিন হয়েছে, যখন ফুটপাথই ছিল আমার আশ্রয়।’
মহাগুরুর আরো সংযোজন, ‘আমি চাই না, আমি যে কষ্টের মধ্যে দিয়ে গিয়েছি, অন্য কেউ সেই কষ্টের মুখোমুখি হোক। সেই কারণে চাই না, আমার উপর বায়োপিক তৈরি হোক। আমার জীবন কাউকে প্রভাবিত করবে না। বরং উল্টোটাই হতে পারে। মানসিক ভাবে ভেঙে দিতে পারে। আমি কিংবদন্তি হতে পেরেছি অসংখ্য হিট দিয়েছি বলে নয়, বরং আমি আমার কষ্টগুলো চেপে রেখেছি সে জন্যই।’
প্রসঙ্গত, অভিনেতাকে শেষ দেখা গেছিল বিবেক অগ্নিহোত্রীর ছবি ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’-এ। এতো বছর পরেও দূর্দান্ত অভিনয় দিয়ে মন জিতে নিয়েছিলেন তিনি। একথা সত্যিই জানা নেই যে, মহাগুরুর জীবনের কথা কেউ কখনও জানতে পারবেন কি না! তবে একথা সত্যি যে, তার জীবনসংগ্রামকে প্রণাম করে গোটা দেশের মানুষ।