বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিরতার নতুন এক অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। শেখ হাসিনার পর এবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবনের দিকে জনতার ক্ষোভ ছুটে গেছে। সরকারী চাকরির বয়সসীমা ৩১ থেকে ৩৫ করার দাবিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ঢাকার রাজপথ। দেশটির রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি নতুন করে উত্তাল হয়ে উঠেছে। প্রশ্ন উঠছে, বদলে যাওয়া বাংলাদেশ কি নতুন আন্দোলনের দাবিগুলিও মেনে নেবে?
কেন নতুন করে বিক্ষোভ?
গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভে মূল দাবি হলো, সরকারি চাকরির বয়সসীমা বাড়িয়ে ৩৫ বছর করা হোক। দীর্ঘদিন ধরেই এই দাবি বাংলাদেশের ছাত্র ও যুব সমাজের মধ্যে জ্বলন্ত ইস্যু হিসেবে রয়ে গেছে। আগেও এই দাবিতে আওয়ামি লিগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছিল, কিন্তু সেই সময় শেখ হাসিনার সরকার দাবি পূরণে এগিয়ে আসেনি। এইবার পরিস্থিতি ভিন্ন।
এক মাসের রাজনৈতিক উত্তাপ এবং শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আশা জাগালেও, বাংলাদেশের জনতার ক্ষোভ থামেনি। বরং নতুন করে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে এবং উত্তাল জনতা সরাসরি প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের বাসভবনের দিকে পদযাত্রা করেছে।
আন্দোলনের সূচনা ও পুলিশের ভূমিকা
সোমবার সকাল থেকে ঢাকার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে হাজারো মানুষ জড়ো হয়ে তাদের দাবি জানাতে শুরু করেন। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল মিন্টো রোডে অবস্থিত মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবন ‘যমুনা’। যদিও পুলিশ আগে থেকেই সেখানে সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল, তবু আন্দোলনকারীরা সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যমুনার দিকে এগোতে থাকে। পুলিশের বাধা সত্ত্বেও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে এবং শেষ পর্যন্ত পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে বাধ্য হয়।
বাংলাদেশে বদলের ছাপ
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি একটি বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বদলের বাংলাদেশ কি নতুন দাবিগুলির প্রতি সাড়া দেবে? শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার কি এই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে?
আন্দোলনকারীরা মতে, তাদের দাবিটি ন্যায্য ও বর্তমান প্রজন্মের ভবিষ্যতের জন্য এই সিদ্ধান্তটি জরুরি। কিন্তু একই সঙ্গে সরকারের স্থায়িত্ব ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখাও জরুরি। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে বিক্ষোভ-আন্দোলনের পথ সবসময়ই রাজনৈতিক পরিবর্তনের সূচক হিসেবে কাজ করেছে। এখন আগামী দিনে কি হতে চলেছে সেটাই দেখার।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি খুবই সংবেদনশীল। একদিকে সরকারি চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনকারীরা সরব, অন্যদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে স্থিতিশীলতা রক্ষার গুরুদায়িত্ব। মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারকে এখন দৃঢ়ভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে এবং জনতার দাবির প্রতি সাড়া দিতে হবে। তাছাড়া দেশে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতার মধ্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা হবে বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশে আবারো শান্তি ফিরে আসবে কিনা, তা সময়ই বলে দেবে।