নিউজ শর্ট ডেস্ক: ইলিশ-চিংড়ি (Hilsa-Chingri) নিয়ে বাঙালির আবেগ আজকের নয়। এই দুই মাছ (Fish) নিয়ে হামেশাই ভোজন রসিকদের মধ্যে চলতে থাকে দড়ি টানাটানি। বিশেষ উৎসব অনুষ্ঠানে কিংবা কোন বিশেষ দিনে প্রতিটি বাঙালি বাড়িতে হয়েই থাকে ইলিশ চিংড়ির আয়োজন। যদিও ইলিশ মাছ বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে পাওয়া যায় তবে চিংড়ি মাছের দেখা মেলে প্রায় সারা বছরই।
কিন্তু ভোজন রসিক মৎস্য প্রেমীদের দাবি বাংলাতেই রয়েছে এমন একাধিক মাছ যা স্বাদে-গন্ধে ইলিশ চিংড়িকেও অনায়াসে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়তে পারে। কিন্তু শুধুমাত্র প্রচারের অভাবে আড়ালেই থেকে গিয়েছে বাংলার এমনই একটি সুস্বাদু মাছ। মৎস্য প্রেমীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় এমনই একটি মাছ হল বোরোলি (Boroli)।
মাছ আকারে ইলিশের কাছে পাত্তা না পেলেও স্বাদে গন্ধে এই মাছ অতুলনীয়। তাই এই রুপোলী সুন্দরীকে অনেকেই আবার তিস্তার ইলিশ বলে আখ্যা দিয়ে থাকেন। উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি নদীর এই রুপোলী শস্যের তারিফ কিন্তু শুধু আম জনতাই নয় করেছেন বাংলার প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু থেকে শুরু করে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়-ও।
এমনকি বাংলার বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যাযও এই বোরোলি মাছ খেতে দারুন পছন্দ করেন। এছাড়াও বাংলার বিখ্যাত সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় যিনি আদতে একজন কট্টর নিরামিষাশী তিনিও তাঁর একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন উত্তরবঙ্গ বলতেই নাকি তাঁর মনে পড়ে যায়, বোরোলি কথা।
আরও পড়ুন: গরমের ছুটিতেই বাতিল উত্তরবঙ্গের একাধিক ট্রেন! রেলের সিদ্ধান্তে চরম ভোগান্তি যাত্রীদের
উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি নদীর রূপালী শস্য বোরোলি খুব বড় হলে সাড়ে তিন থেকে চার ইঞ্চি হয়ে থাকে। তাতেই এই মাছের স্বাদে মাতোয়ারা গোটা বাঙালি। সরষে দিয়ে বোরোলির পাতুরি কিংবা কালো জিরে কাঁচা লঙ্কা ফোড়ন দিয়ে বোরেলির পাতলা ঝোলের স্বাদও অতুলনীয়। একটা সময় উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি নদীর অববাহিকায় অবস্থিত বাসিন্দারাই এই মাছ খেতেন। কিন্তু এখন এই মাছের চাহিদা এত বেড়ে গিয়েছে যে এই মাছের জোগান দিয়েও শেষ করা যাচ্ছে না।
তবে মৎস্যজীবীদের দাবি বোরোলি খুবই সুখী মাছ, তাই জলে সামান্য নোংরা দেখলেই এরা মুখ ফিরিয়ে নেয়। সাধারণত সারা বছরে বোরোলি মাছ পাওয়া যায় মূলত বর্ষা শুরুর আগে এপ্রিল-মে মাসে আর বর্ষার শেষে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে। কিন্তু এখন বোরোলি চাষের পরিমাণ এতটাই কমে গিয়েছে যে নির্দিষ্ট দুই সময়েও সেভাবে বাজারে বোরোলি উঠছে না।
প্রসঙ্গত বোরোলি মাছের বেশি অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। তাই মূলত পাহাড়ি খরস্রোতা নদীর জলেই এদের দেখা মেলে। তিস্তা ছাড়াও বোরোলি মাছের দেখা পাওয়া যায় তোর্সা, করলা, রায়ডাক, বালাসন, কিংবা কালজানিতেও। কিন্তু ভোজন রসিকদের দাবি তিস্তার বোরেলি সবচেয়ে সেরা। কিন্তু এখন বোরেলি মাছের পরিমাণ এতটাই কমে গিয়েছে যে বোরেলি ফেরাতে নানা বিকল্প বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। যদিও বোরোলি প্রেমীরা বলছেন এই মাছের সাথে আসল বোরোলি মাছের স্বাদের আকাশ পাতাল পার্থক্য।