নিউজশর্ট ডেস্কঃ কৃষিপ্রধান দেশ হওয়ায় ভারতের প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ কৃষিকাজের সাথে যুক্ত। তবুও কৃষকদের আর্থিক উন্নতি সেই ভাবে দেখা যায়নি। তবে এবার সেই ছবি পাল্টাচ্ছে। আজ এমন এক ব্যক্তির সম্পর্কে আপনাদের জানাবো যে প্রথাগত শস্য ছেড়ে ঔষধি গাছের চাষ করেই বছরে কোটি টাকা উপার্জন করছেন। কি সেই ফসল? উত্তর হল অ্যালোভেরা। ভারতে তো বটেই বিদেশেও অ্যালোভেরার চাহিদা প্রচুর তাই ধীরে ধীরে অনেকেই এটি চাষ করতে ইচ্ছুক হয়ে উঠছেন।
আজকে যে ব্যক্তির কথা আপনাদের জানাবো তিনি হলেন, রাজস্থানের কুচামান শহরের রাকেশ চৌধুরী। কৃষক পরিবারের ছেলে রাকেশ শুরু থেকেই পড়াশোনায় বেশ ভালো ছিলেন। পরবর্তীকালে রাজস্থানের মহারাজা কলেজ থেকে বিএসসি পাশ করেন। এরপর বিসিএ পাশ করে জয়পুরে ঔষধি গাছ নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। ২০০৩ তার কাজ ছিল মূলত স্থানীয় কৃষকদের সমস্যার কথা জানা, তারপর তাদের বোঝানো ঔষধি গাছের চাষের সম্পর্কে এবং চুক্তি করিয়ে ঔষধি গাছের চাষ করানো। কারণ সেই সময় মানুষ ঔষধি গাছের চাষের সম্পর্কে সেভাবে সচেতন ছিল না।
দীর্ঘদিন ঘরে ঔষধি গাছের সম্পর্কে লোককে সচেতন করে তুলতে গিয়ে রাকেশ নিজে বেশ জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। এরপর ২০ বছর বয়সে বাবার চাষের জমিতেই ঔষধি গাছের চাষের সিদ্ধান্ত নেন। তারপর বাবার সাথে কথা বলে রাজি করানোর পর চাষ শুরুও করেন। এর জন সরকারের তরফ থেকে ভর্তুকি হিসাবে ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকাও মিলেছিল। কিন্তু আবহাওয়া ঠিক না থাকায় ২০০৪ সালে তিনি ভীষণভাবে ব্যর্থ হন। তবে হাল ছাড়েননি তিনি। তাই ২০০৫ সালেই দুর্দান্ত ফসল ফলাতে সক্ষম হয়ে যান।
রাকেশ অ্যালোভেরা চাষ করেছিলেন। কিন্তু মুশকিল হল ফসল ভালো হলেও ক্রেতা পাওয়া মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তখন রাকেশ নিজে থেকেই বড় কোম্পানির খোঁজ শুরু করেন যারা অ্যালোভেরা কিনতে চায়। সেসময় ইন্টারনেট এখনের মত এতটা উন্নত না হলেও বহু চেষ্টার পর রাকেশ কোম্পানি খুঁজে পান যারা অ্যালোভেরা কিনতে প্রস্তুত। স্যাম্পেল পছন্দ হওয়ার পর উত্তর ভারতের প্রথম অ্যালোভেরা প্রসেসিং ইউনিট তৈরী হয় তার গ্রামেই। ধীরে ধীরে ২৫৫ এর বেশি ধরণের গাছের সাপ্লাই করছিলেন রাকেশ। কিন্তু ২০০৯ সালেই সেই কোম্পানি রাকেশের সাথে কাজ বন্ধ করে দেয়।
আরও পড়ুনঃ নতুন পদ্ধতিতে নার্সারি, চাকরি ছেড়ে এখন চাষ করেই মাসে ১৬ লাখ টাকা কামাচ্ছেন চন্দ্রকান্ত
পরিস্থিতি এমন হয় যে ৫৫ লক্ষ টাকার ধার হয়ে গিয়েছিল রাকেশের। তবে হার মানতে প্রস্তুত ছিলেন না তিনি তাই ২০১৪ সালে বিনায়ক হার্বাল নামক কোম্পানি রেজিস্ট্রার করেন। নতুন উদ্যোগ নিয়ে শুধুমাত্র অ্যালোভেরা চাষ শুরু করেন আর ফলও মেলে হাতেনাতে। ২০২১ সালে বিনায়ক হার্বাল আগ্রো লিমিটেড লঞ্চ হয় এরপর ধীরে ধীরে ব্যবসা আরও বেড়েছে। আজ রাকেশ ২২ টি কোম্পানির মালিক যা ঔষধি গাছ চাষ ও সাপ্লাই করে। হিমালায়া থেকে পতঞ্জলির মত কোম্পানিকে অ্যালোভেরা সাপ্লাই করে তারই কোম্পানি। বছরে মোট ৩০ কোটি টাকার ব্যবসা করেন রাকেশ।