নিউজশর্ট ডেস্ক: দক্ষিণ ভারতের মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম হল কেরালার শ্রী অনন্ত পদ্মনাভস্বামী মন্দির (Sree Padmanabha Swami Temple)। অষ্টম শতাব্দীতে নির্মিত শ্রী পদ্মনাভস্বামী মন্দির ভারতের 108টি মন্দিরের মধ্যে একটি যা ভগবান বিষ্ণুকে উৎসর্গ করে তৈরি হয়েছে। এই মন্দিরের গর্ভগৃহেই শায়িত রয়েছেন ভগবান শ্রীবিষ্ণু। ঐতিহাসিকদের একাংশের দাবি, আঠেরো থেকে উনিশ শতকের মধ্যে এই মন্দির তৈরি করা হয়েছিল। ওই সময় দক্ষিণী রাজ্যটির ওই অংশের নাম ছিল ত্রিবাঙ্কুর।
কেরলের রাজধানী শহর তিরুবানন্তপূরম নামটি গৃহীত হয়েছে শ্রীপদ্মনাভস্বামী মন্দিরের দেবতার থেকে। যিনি অনন্ত নামেও খ্যাত (ভগবান বিষ্ণু অনন্ত নাগের উপরে অর্ধশায়িত)। তিরুবানন্তপূরম কথাটির আক্ষরিক অর্থ হল ভগবান অনন্ত পদ্মনাভস্বামী। বিশ্বাস করা হয়ে থাকে যে, শ্রীপদ্মনাভস্বামী মন্দিরটি যেখানে অবস্থিত সেটি সপ্ত পরশুরাম ক্ষেত্রের মধ্যে অন্যতম একটি। এই মন্দিরটির উল্লেখ পুরাণে পাওয়া যায়, যেমন, স্কন্দ পুরাণ ও পদ্ম পুরাণ। মন্দিরটি পবিত্র পুকুর পদ্ম তীর্থম, যার অর্থ হল ‘পদ্ম ঝরনা’র পাশে অবস্থিত। বর্তমানে মন্দিরটি ত্রাভাংকোরের রাজপরিবারের নেতৃত্বে একটি অছিপরিষদ দ্বারা পরিচালিত হয়।
শ্রীপদ্মনাভস্বামী মন্দিরের দেবমূর্তি
শ্রীপদ্মনাভস্বামী মন্দিরের দেবমুর্তিটি এর গঠন শৈলীর জন্য প্রসিদ্ধ, যার মধ্যে রয়েছে 12008 টি শালগ্রাম শিলা, যেগুলি নেপালের গন্ডকী নদীর তীর থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল। শ্রীপদ্মনাভীস্বামী মন্দিরের গর্ভগৃহ বা পবিত্র বেদী একটি পাথরে স্ল্যাব দিয়ে তৈরি যার উপরে 18 ফুট দৈর্ঘ্যের মূল দেবমূর্তিটি রয়েছে। মন্দিরের মূল বিষ্ণু মূর্তিটি কষ্টিপাথরে তৈরি নয়। কথিত রয়েছে, এক হাজার আটটি শিলগ্রাম শিলা সাজিয়ে তার উপর বিশেষ উপায়ে এক আয়ুর্বেদিক আঠালো মিশ্রণ ঢেলে তৈরি করা হয়েছিল সুবিশাল এই মূর্তি।
মুর্তিটিকে তিনটি বিভিন্ন দরজা দিয়েই দর্শন করা যেতে পারে। মস্তক এবং বক্ষ প্রথম দরজা দিয়ে, হস্তগুলি দ্বিতীয় দরজা দিয়ে এবং পদযুগল তৃতীয় দরজা দিয়ে দর্শন করা যায়। মূর্তিটির নাভিতে রয়েছে একটি পদ্মচিহ্ন। সেই পদ্মের উপর রয়েছেন প্রজাপতি ব্রহ্মা। গর্ভগৃহে শ্রী বিষ্ণুর দুই স্ত্রী, মাতা লক্ষ্মী ও ধরিত্রীর মূর্তিও রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ আজব রহস্য! বিয়ের আগে পুরীর মন্দিরে গেলেই ভাঙা যায় কাপলদের প্রেম? কারণ জানলে অবাক হবেন
মন্দিরের অন্দরে অজানা রহস্য
এই মন্দিরের আনাচে-কানাচে লুকিয়ে রয়েছে নানা রহস্যের গন্ধ। মন্দিরের মধ্যেই রয়েছে সুবিশাল একটি পাতালঘর। তার মধ্যে A থেকে F পর্যন্ত পর পর ছয়টি ভাগে বিভক্ত আছে কুঠুরি গুলি। ২০১১-য় পদ্মনাভস্বামী মন্দিরের পাতালঘরের গোপন কুঠুরি খুলতে চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন IPS অফিসার টি পি সুন্দরাজন। এর পরই সাত জনের একটি দলকে সেখানে পাঠায় আদালত। তাঁদের উদ্যোগেই এক এক করে খোলা হয় মন্দিরের গোপন কুঠুরিগুলি। আর সেগুলি খুলতেই বেরিয়ে আসে রাশি রাশি ধনরত্ন।
পদ্মনাভস্বামী মন্দিরের গোপন কুঠুরিগুলিতে মেলা ধন সামগ্রীর পূর্ণাঙ্গ তালিকা আজও তৈরি হয়নি। তবে সূত্রের খবর, ওই সময় মন্দিরে চোরা কুঠুরিতে মেলা সামগ্রীর বাজার মূল্য ছিল ২২ বিলিয়ন ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় এক লাখ কোটি টাকার সমান। 4-ফুট উচ্চ এবং 3-ফুট চওড়া কঠিন খাঁটি-সোনার মূর্তি মহাবিষ্ণুর হীরে এবং মূল্যবান পাথর দিয়ে খচিত; কঠিন সোনার সিংহাসন, হাজার হাজার খাঁটি সোনার চেইন, যার একটি ছিল ১৮ ফুট লম্বা; রোমান সাম্রাজ্য এবং মধ্যযুগের স্বর্ণমুদ্রায় পূর্ণ বস্তা, এই সমস্ত কিছু পাওয়া যায় A, C,D, E, F-এই পাঁচটি কুঠুরি থেকে।
বন্ধ দরজা পাহারায় বিষধর সাপ
সমস্ত কুঠুরি খোলা গেলেও B-নামের কুঠুরিটি খোলা যায়নি। ওই কুঠুরির দরজার গায়ে খোদাই করা রয়েছে দু’টি বিষাক্ত গোখরো সাপের বিশাল হাঁ করা মুখ। তাছাড়া দরজায় কোনও নাটবল্টু, কড়া বা ছিটকিনির হদিশ মেলেনি। ফলে বন্ধ অবস্থাতেই রয়ে গিয়েছে ওই কুঠুরি। বিশ্বাস করা হয় যে ভল্ট বি এর দরজার পিছনে যা কিছু আছে তা বিষাক্ত সাপ, ভ্যাম্পায়ার এবং অতিপ্রাকৃত শক্তি দ্বারা সুরক্ষিত। মন্দিরের পূজারিদের দাবি, যিনি ওই গোপন কুঠুরি খুলবেন, তাঁর প্রাণ সংশয় হতে পারে। তাছাড়া জোর করে দরজা খোলা হলে গোটা দেশে নেমে আসবে ভয়ংকর কোনও প্রলয়। এছাড়াও নাগপাশ মন্ত্রবলে ওই দরজা বন্ধ রাখা হয়েছে বলে দাবি মন্দিরের পুরোহিতদের।