পার্থ মান্নাঃ যতদিন যাচ্ছে ততই উন্নতি হচ্ছে ভারতীয় রেলের। একদিকে যেমন নিত্য নতুন ট্রেন ট্র্যাকে নামছে, তেমনি নতুন রেলপথ চালু হচ্ছে। একদশক আগেও যেখানে ভারতের বুকে হাইস্পীড ট্রেন ছিল না সেখানে ১৩০ কিমি বেগে হু হু করে ছুটছে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। তবে এত প্রযুক্তি আর উন্নতির মাঝেও কিছু এমন জায়গা রয়েছে যার সম্পর্কে হয়তো মানুষ জানেই না বা ভুলতে বসেছে। আজ এমনই একটি ট্রেন স্টেশনের সম্পর্কে জানাবো আপনাদের।
ব্রিটিশ আমলে তৈরী স্টেশন ভোলার পথে মানুষ
ব্রিটিশ আমলে তৈরী হয়েছিল এই স্টেশনটি। জানলে অবাক হবেন এই স্টেশনটির একটা অংশ রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে আরেকটি রয়েছে ঝাড়খণ্ডে। স্বাধীনতারও আগে ব্রিটিশরা তৈরী করে এই পলাশস্থলী স্টেশন। এখন যা বীরভূমের রুক্ষ লাল মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকা এক ভগ্নপ্রায় স্টেশনবাড়ি। যার চারিদিকে রয়েছে শাল-শিমূল-সেগুন-মহুয়া গাছ। এই রেলপথ বীরভূমের ভীমগড় থেকে শুরু করে ঝাড়খন্ড পর্যন্ত বিস্তৃত। যদিও আজ স্টেশনটির বেশিভাগ অংশই ঝাড়খণ্ডের অন্দরে, তবে আজ যে অংশের কথা বলছি সেটুকু বাংলার অংশ।
স্টেশনের নিচেই রয়েছে কয়লাখনি
কমবেশি সকলেই জানেন ঝাড়খন্ড রাজ্য কয়লাখনির জন্য বিখ্যাত। তাই পলাশস্থলীতেও কয়লা পাওয়া যায়, তাও আবার স্টেশনের নিচেই। কয়লাখনির খোঁজ একবার পেলে সেখানে নিয়ম মেনে হোক বা বেআইনিভাবে কয়লা উত্তোলন চালু হয়। এর ফলে যেটা হওয়ার ভয় ছিল সেটাই হল। রেললাইনের এলাকার মাটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ট্রেন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
১৯৫৩ সালে প্রথম চালু হয়েছিল এই রেললাইন। সেই সময় ২৭ কিমি দীর্ঘ এই লাইনে যেমন লোকসংখ্যা বেশি ছিল তেমনি দিনে ৪টি পর্যন্ত ট্রেন চলত। পূর্ব রেলের অন্তর্গত সাঁইথিয়া-অন্ডাল রুটের এই স্টেশনে জনসমাগম হত বেশ। তবে আজ প্রায় ২০ বছর ধরে এই স্টেশন দিয়ে কোনো ট্রেন চলাচল করে না।
সময়ের সাথে হারিয়ে গেল পলাশস্থলী
একসময় স্থানীয় মানুষদের জীবনের একটা অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল এই স্টেশন। কারণ কলকাতা, বর্ধমান, আসানসোলের মত জায়গার সাথে যোগাযোগের সহজ মাধ্যম ছিল এই রেলপথ। তবে পরবর্তীতে যত সময় এগিয়েছে তত রাস্তাঘাটের উন্নতি ও অন্যান্য রেলপথ চালু হওয়ায় এই স্টেশনের ব্যবহার কমে যায়। এরপর একটা সময় অবশ্য যাত্রীবাহী ট্রেন না চললেও মালগাড়ি চলত।
মাঝে এই স্টেশনটিকে পুনরায় চালু করার জন্য দাবি জানানো হয়েছিল। তবে শেষমেশ ২০০২ সালের সেপ্টেম্বর নাগাদ ট্রেনচলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে আর ট্রেন চলেনি। এমনকি স্টেশনে যাওয়ার রাস্তায় সময়ের সাথে সাথে স্টেশন নাম একটা ভগ্নপ্রায় বাড়ি অবশিষ্ঠ রয়ে গিয়েছে।