নিউজশর্ট ডেস্কঃ কথিত আছে, পৃথিবীতে ৩৩ কোটি আরাধ্য দেবতা। সেই সঙ্গে তাঁদের মন্দিরও (Temple) ছড়িয়ে রয়েছে নানা প্রান্তে। শিব, দুর্গা, কালী, নারায়ণ, কৃষ্ণ, লক্ষ্মী, মনসা, এমনই আরও কতশত দেবদেবীর মন্দির ছড়িয়ে রয়েছে দেশের নানা প্রান্তে। এমনকি একই দেবতার আলাদা রূপের জন্য গড়ে উঠেছে আলাদা আলাদা মন্দির। প্রতিদিন সেসব মন্দিরে ভক্তরা ভিড় জমান। জানলে অবাক হবেন এমনও একটি মন্দির রয়েছে যেখানে রাদাহ্যঃ দেবতা নয় বরং পিঁপড়ে (Ant Temple)।
শীত হোক বা গ্রীষ্ম, কিংবা বর্ষা; সারাবছরই গৃহস্থ বাড়িতে পিঁপড়ের উপদ্রব কমবেশি লেগেই থাকে। খালি অসাবধানে খাবার মাটিতে পড়ার অপেক্ষা, সঙ্গে সঙ্গেই এসে জড়ো হয় লাল রঙের পিঁপড়ের দল। আর এই পিঁপড়েদের উপদ্রব থেকে বাঁচতে অনেকেই পা দিয়ে পিষে মেরে দেন পিঁপড়েদের। তবে তার জন্য কোন পাপ হয় না। কিন্তু পিঁপড়েদের মন্দিরে ভুলেও পিঁপড়ে মারলে হয় ঘোর পাপ!
কোথায় রয়েছে এই পিঁপড়েদের মন্দির?
এই মন্দিরটি কেরলের কুন্নুর জেলায় অবস্থিত। স্থানীয়দের কাছে এই মন্দির উরুমাবাচাম কোট্টাম নামে পরিচিত। এখানে পিঁপড়ে দেখলে কেউই মারতে উদ্যত হন না। ভক্তি ভরে তাদের জন্য খাবার সাজিয়ে রাখেন। যদিও মন্দির বলতে যা বোঝায় এখানে তেমন কিছু নেই। রয়েছে বলতে একটা বড় চাতাল। আর অসংখ্য পিঁপড়ের ঢিবি। এখানেই ভোগ নিবেদনের চল রয়েছে। এমনকি ভক্তরা এই ঢিবির সামনে এসেই প্রণাম ঠুকে যান।
কেন এই মন্দিরে আরাধ্য দেবতা পিঁপড়ে?
মন্দির সম্পর্কে প্রচলিত এক কাহিনী রয়েছে। লোক মুখে শোনা যায়, বহুকাল আগে এই অঞ্চলে একটি গণেশ মন্দির তৈরির সিদ্ধান্ত নেন স্থানীয়রা। এবার মন্দির তৈরির জন্য তো নির্দিষ্ট একটা জায়গা দরকার। বাস্তু মেনে সেই জায়গা বেছে দেন স্থানীয় এক জ্যোতিষী। সেখানেই নতুন মন্দির তৈরির প্রস্তুতি সারা হয়। কিন্তু মন্দির তৈরি করতে গিয়ে সবাই দেখেন, সেখানে অনেকগুলো পিঁপড়ের ঢিবি রয়েছে। সেসব সরিয়ে মন্দির গড়লে পিঁপড়ের উৎপাত লেগেই থাকবে। তাই অন্যত্র মন্দির তৈরির কথা ভাবেন সকলে। এতে আপত্তি তোলেন সেই জ্যোতিষীই।
আরও পড়ুনঃ ‘হাওড়া ব্রিজে’র দৌলতে পেয়েছিলেন ব্যাপক জনপ্রিয়তা, কোথায় হারিয়ে গেলেন মোনালিসা?
নিদান দেন, এখানে মন্দির না গড়লেও নিয়মিত পুজোর ব্যবস্থা করতে। তাঁর কথামতো গণেশ মন্দির তৈরি হয় অন্য জায়গায়। সেইসঙ্গে ওই পিঁপড়ের ঢিবির জায়গাটিকে গোল করে বাঁধিয়ে দেওয়া হয়। সেই থেকেই এখানে পিঁপড়ে পুজোর নিয়ম চালু হয়েছে।
এখনও গণেশের উদ্দেশে তৈরি ভোগ আগে এখানে এসে পিঁপড়েদের দেওয়া হয়। অনেকে এমনিই পুজো দিয়ে যান। প্রসাদ মূলত নারকেল। পুরোহিতরা ঢিবির পাশে নারকেল ফাটিয়ে সেই জল ঢেলে দেন। অনেকে বলেন, এখানে ভক্তিভরে কোনও প্রার্থণা করলে তা অবশ্যই ফলে। আর সেই বিশ্বাসের জোরেই এখনও কেরলের এই মন্দিরে নিয়মিত পূজিত হচ্ছেন পিঁপড়ে দেবতা।