সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে রয়েছে বিষধর সাপের বিভিন্ন প্রজাতি যার মধ্যে রয়েছে ভারতের নামও। আমাদের দেশেই প্রায় ২৭৫ টিরও বেশি প্রজাতির সাপ বাস করে, যার বেশিরভাগই বিপজ্জনক এবং বিষাক্ত। এমতাবস্থায়, আজ আমরা আপনাকে ভারতে পাওয়া সবচেয়ে বিষাক্ত সাপের কথা বলতে যাচ্ছি যাদের একটা ছোবল ডেকে আনতে পারে স্বয়ং যমরাজকে।
১) কিং কোবরা : কিং কোবরা শুধু ভারত নয় গোটা বিশ্বেরই ত্রাস। একে এমনি এমনি সাপের রাজা বলা হয় না, এই সাপটি খুবই বিপজ্জনক এবং বিষাক্ত। ভারতে কিং কোবরা নাগরাজ নামেও পরিচিত, যে ভগবান শিবের প্রিয় এবং তাই ভারতীয়রা এই সাপকে পূজাও করে থাকে। কিং কোবরার শরীরের গড় দৈর্ঘ্য ৫ থেকে ৬ মিটার, এর শরীরে উপস্থিত বিষ এতটাই মারাত্মক যে এর কয়েক ফোঁটা একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকেও মেরে ফেলতে পারে। এই সাপটির খাদ্য হলো অন্যান্য বিষাক্ত সাপ। এর থেকেই আপনি সহজে এর বিষাক্ততা অনুমান করতে পারবেন।
২) রাসেলস বাইপার : ভারতের প্রায় সব রাজ্যেই এটি পাওয়া যায়। রাসেলস বাইপার নামের এই সাপটি খুবই বিপজ্জনক, মূলত তামিলনাড়ুর রোপিত এলাকার মাটিতে এবং মাঠের কিনারায় বাস করে। এই সাপের বিষে বিপজ্জনক নিউরোটক্সিন পাওয়া যায়, যা মানুষের শরীরে প্রবেশের সাথে সাথে রক্ত চলাচলে প্রভাব ফেলে এবং এর কারণে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মানুষ মারা যেতে পারে। উল্লেখ্য, এই সাপের কামড়ে প্রচণ্ড ব্যথা হয়, যার কারণে শিকারকে দীর্ঘ সময় ধরে অসহ্য যন্ত্রণার সম্মুখীন হতে হয়।
৩) স্পেক্টিকেল্ড কোবরা : এই প্রজাতির সাপ প্রধানত দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পাওয়া যায়। এটি মূলত কোবরারই চারটি সবচেয়ে সাধারণ প্রজাতির মধ্যে একটি। স্পেক্টিকেল্ড কোবরার বিষে বিপজ্জনক নিউরোটক্সিন পাওয়া যায়, যা আক্রমণের পরপরই শরীরে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। এই সাপের বিষের কারণে, শিকারের তীব্র পেশী ব্যথা এবং পক্ষাঘাতের মতো সমস্যা দেখা দেয়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেলে ব্যক্তির মৃত্যু অনিবার্য।
৪) সফট স্কেল্ড বাইপার: সফট স্কেলড বাইপার হল এমন একটি সাপ যেটি যেকোনো পরিবেশে নিজেকে পুরোপুরি লুকিয়ে রাখার ক্ষমতা রাখে। দেশের বেশিরভাগ রাজ্যেই পাওয়া যায় এই সাপটি। সাধারণত রাতের বেলা শিকারের সন্ধানে বের হয়ে থাকে। নরম আকৃতির বাইপারের এক ছোবলেই শরীরের রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে তার ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্ত পৌঁছায় না এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ব্যক্তির মৃত্যু হয়। রাজস্থানের বালুকাময় এবং রুক্ষ অঞ্চলে, এর আধিক্য বেশি দেখা যায়।
৫) কমন ক্রেট : ভারতে পাওয়া কমন ক্রেট প্রজাতির সাপ সচরাচর জনবহুল জায়গা থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করে, যার কারণে এই সাপটি সহজে মানুষের সামনে আসে না। তবে যদি কেউ এই সাপ নিয়ে মস্করা করার দুঃসাহস দেখায়, তবে এই সাপটি তাকে আক্রমণ করতে মোটেও পিছপা হয় না। এই প্রজাতির সাপের গড় দৈর্ঘ্য ৪ ফুট পর্যন্ত। এর ছোবলে শিকারের শ্বাস নিতে সমস্যা হয় এবং সে দ্রুত ঘুমিয়ে যায় এবং অজ্ঞান হয়ে যায়। সময়মতো চিকিৎসা না পেলে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু অনিবার্য।
এই ছিল ভারতে পাওয়া ৫ টি সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ, যাদের একটা ছোবল ডেকে আনে মৃত্যু। যদি কখনও এই সাপগুলির সম্মুখীন হয়ে থাকেন তো এদের উত্যক্ত করার পরিবর্তে চুপচাপ তার পথ থেকে সরে দাঁড়ানো শ্রেয়। অন্যথায় আপনাকে তাদের বিষের মুখোমুখি হতে হতে পারে।