ঝাঁকড়া চুল, হাতে লম্বা বন্দুক, তিরিক্ষি মেজাজ আর এক চোখ কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা। জলদস্যু বলতে এরকমই একটা অবয়ব ভেসে ওঠে আমাদের চোখের সামনে। বহুল চর্চিত ছবি ‘পাইরেটস অফ দ্য ক্যারিবিয়ান’-এও এমনই অবয়ব দেখেছি আমরা। জনি ডেপের দূর্দান্ত অভিনয়ের মাধ্যমে বাঙালির একটু হলেও জলদস্যুদের ধারণা পেয়েছি। যদিও তাদের রোমাঞ্চকর জীবনযাপন সবসময়ই থ্রিলারপ্রিয় মানুষের আগ্রহের বিষয় ছিল।
তবে বর্তমানে তাদের আধিপাত্য আর বিশেষ দেখা যায়না। একটা সময় ছিল, যখন জলদস্যুদের দাপটের কারণে সমুদ্রে যাতায়াত করতেও ভয় পেতো মানুষ। জাহাজদখল কিংবা অপহরণের খবর বেশ ঘটা করে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় স্থান করে নিত। অপহরণের পর মুক্তি নিয়ে দর কষাকষি এসবই ছিলো তখনকার নিত্যদিনের ঘটনা। তবে এখন আর জলদস্যুদের দ্বারা জাহাজ লুটপাটের খবর খুব একটা চোখে পড়ে না।
এমতাবস্থায় সকলেই একটা বিষয় হয়তো লক্ষ্য করে থাকবেন যে, এইসব দলের সদস্যদের প্রায় প্রত্যেকেরই একটা চোখ কালো কাপড়ে ঢাকা থাকে। কখনও কি মনে প্রশ্ন জেগেছে যে, এদের চোখ কালো কাপড়ে কেন ঢাকা থাকে? এ কি নিছকই একটা ট্রেডমার্ক নাকি এর পেছনে রয়েছে কোনো রহস্য? অনেকেই আবার তাদের একচোখ অন্ধ বলে মনে করেন কিন্তু জানিয়ে দিই মোটেও তা নয়।
আসলে এটিও জলদস্যুদের একটি কৌশল বলতে পারেন। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, মানুষের চোখ অন্ধকার থেকে আলোতে আসার পর মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মানিয়ে নিতে পারে। আবার উলটোটা হলে তখন সময় লাগে কম করে হলেও ২৫ মিনিট। এদিকে জলদস্যুদের সবসময়ই বিপদ লেগেই থাকে। টিকে থাকার জন্য আলো ও অন্ধকার কুপ সব জায়গাতেই বিচরণ করতে হতো তাদের।
কখনো জাহাজের উপরের পাটাতনে তো কখনো জাহাজের ভিতরের ‘ডেক’-এ। এদিকে ডেকের ভেতরটা এতোটাই অন্ধকার যে সেখানে টিকে থাকা মুশকিল। এমতাবস্থায় কখনো ডেকের ভেতরে যুদ্ধ শুরু হলে তো হয়েই গেল। দীর্ঘ ২৫ টা মিনিট অপেক্ষা করার মতো সময় থাকতোনা তাদের কাছে। আর যুদ্ধকালীন এই অন্ধকার অবস্থায় নিজের চোখকে প্রস্তুত রাখার জন্য জলদস্যুরা সর্বদা তাদের এক চোখ কালো কাপড়ে ঢেকে রাখত।
হঠাৎ আলো থেকে অন্ধকারে যাওয়ার সাথে সাথেই চোখের পট্টি খুলে অপর চোখে পরে নিত। এমতাবস্থায় অন্ধকার সয়ে নিতে আর খুব বেশি সময় লাগতোনা তাদের। আর এই কারণেই জলদস্যুদের একটা চোখ সবসময় কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা থাকে।