অদ্ভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে গোটা দেশবাসীর তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বছর ৫৩ এর এক মহিলা। পড়াশোনার কোন বয়স নেই, সীমা নেই, মনের ইচ্ছাটাই বড় কথা একথা তো গুরুজনদের কাছ থেকে বারবার শুনে এসেছি আমরা। তবে এবার এই প্রবাদবাক্যকে বাস্তব করে দেখালেন শীলা রানী। কিন্তু কী এমন করেছেন তিনি যা নিয়ে এতো হইচই শুরু হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। চলুন দেখে নিই আজকের এই প্রতিবেদনে।
পড়ালেখার প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পেটের দায়ে অথবা পরিস্থিতির চাপে বইপত্রকে বিদায় জানিয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। যার কারণে পড়াশোনার ইচ্ছা অসম্পূর্ণ থেকে যায় তাদের। কিন্তু কোনো মানুষ যদি সিদ্ধান্ত নেয় যে তাকে তার অসম্পূর্ণ পড়াশোনা শেষ করতে হবে, তাহলে বয়স যে কোনো বাধা হতে পারেনা তারই জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ হলেন ৫৩ বছর বয়সী শীলা রানী দাস।
ত্রিপুরার বাসিন্দা শীলা রানী দাস চলতি বছরে দশম শ্রেণীর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। একাধারে যেখানে তার দুই মেয়ে দ্বাদশ শ্রেণীতে ভালো নম্বর নিয়ে পাশ করেছেন অপরদিকে মা শীলা রানীও দশম শ্রেণীর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। সম্প্রতি ত্রিপুরা মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড (টিবিএসই) বোর্ড পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করেছিল, যা মা ও দুই কন্যা উভয়েই ভালো নম্বর নিয়ে পাশ করতে সক্ষম হয়েছেন।
শীলা রানীর ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে কথা বলতে গেলে, খুব অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল শীলার। পড়াশোনার প্রতি দারুন উৎসাহী হওয়া সত্ত্বেও পরিবারের চাপে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। বিয়ের পর বেশ কিছুদিন সব ভালো চললেও বিপর্যয় নেমে এলো তারপর।
এমতাবস্থায় হঠাৎই পরলোকগমন করেন তার স্বামী। দুই সন্তানের লালন-পালনের সমস্ত দায়িত্ব এসে পড়ে শীলার ঘাড়ে। দিনরাত পরিশ্রম করে দুই মেয়েকে বড়ো করে তোলেন তিনি। শুধু বড়ো করেন তাই নয়, রীতিমত সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলেন তাদের।
সারাজীবন কষ্ট করে মেয়েদের বড়ো করেছেন তাই এবার মেয়েরাও মায়ের অসম্পূর্ণ ইচ্ছে পূরণ করার প্রচেষ্টায় লেগে পড়ে। মেয়েদের সাহায্যে আর উৎসাহে দশম শ্রেণীর বোর্ড পরীক্ষা দেন তিনি। এরপর শীলা অভয়নগর স্মৃতি বিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং বোর্ড পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। পরীক্ষাতেও বসেন এবং পাস করতেও সক্ষম হন। তবে এখানেই শেষ নয় শীলার পরবর্তী লক্ষ্য হলো দ্বাদশ শ্রেণীর বোর্ড পরীক্ষা।