ধোনির আগে ভারতীয় ক্রিকেটের দুই মহিলা জায়গা পেয়েছেন আইসিসি হল অফ ফেমে; কারা তাঁরা?

ICC Hall Of Fame

ধোনির আগে ভারতীয় ক্রিকেটের দুই মহিলা জায়গা পেয়েছেন আইসিসি হল অফ ফেমে; কারা তাঁরা?

Updated on:

কৃশানু ঘোষ, কলকাতাঃ ভারতীয় ক্রিকেট দলের সর্বকালের অন্যতম সেরা অধিনায়ক, সেরা ফিনিশার, সেরা উইকেটরক্ষক-ব্যাটার হিসাবে বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন মহেন্দ্রে সিং ধোনি। এবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধোনির কৃতিত্বের সম্মান দিয়ে, সোমবার আইসিসি-র তরফ থেকে তাঁকে আইসিসি-র ‘হল অফ ফেম’-এ (ICC Hall Of Fame) অন্তর্ভুক্ত করা হল। ভারতীয় দলের ১১ তম সদস্য হিসাবে এই সম্মান পেলেন ধোনি।

কেন ধোনিকে এই সম্মান দেওয়া হল? | ICC Hall Of Fame

ভারতীয় দলের হয়ে ২০০৪ সালে অভিষেক করেন ধোনি। ২০০৭ সালে তিনি ভারতীয় টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক হিসাবে নির্বাচিত হন। ওই বছরই দায়িত্ব পান ওয়ান-ডে দলের অধিনায়কত্বের। ২০০৮ সালে তিনি ভারতীয় টেস্ট দলের অধিনায়ক হিসাবে নির্বাচিত হন। ১৫ বছরের ক্যারিয়ারে তিনি ৯৮টি টি২০ ম্যাচ খেলে ১৬১৭ রান করেন, ৩৫০টি এক দিনের ম্যাচ খেলে ১০,৭৭৩ রান করেন, এবং ৯০টি টেস্ট ম্যাচে ৪৮৭৬ রান করেন।

এই ১৫ বছরে একাধিক রেকর্ড ভেঙেছেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক। ভারতীয় অধিনায়ক হিসাবে তিনি একমাত্র অধিনায়ক যিনি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, এক দিনের বিশ্বকাপ, এবং চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছেন। এসবের পাশাপাশি তাঁর নেতৃত্বে ভারতীয় ক্রিকেট দল দু’বার এশিয়া কাপ জিতেছে। এক দিনের ফরম্যাটে দু’বার আইসিসি-র বর্ষসেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। সাথে পেয়েছেন পদ্মভূষণ এবং পদ্মশ্রী পুরষ্কারও।

এর আগে কোন কোন ভারতীয় এই তালিকায়  জায়গা পেয়েছেন? | ICC Hall Of Fame

ধোনির আগে আইসিসি-র ‘হল অফ ফেম’-এ ভারতীয় দলের দশজন ক্রিকেটার অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন ২ জন মহিলা ক্রিকেটার। চলুন দেখে নেওয়া যাক কারা এই ১০ জন।

১। ভারতীয় ক্রিকেট দলের সর্বকালের সেরা বাঁ-হাতি স্পিনার হিসাবে ২০০৯ সালে এই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন বিষেণ সিং বেদি। তিনি ৬৭টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ২৬৬টি উইকেট নিয়েছিলেন। তিনি ২২টি ম্যাচে ভারতের অধিনায়কত্বও করেছেন।

২। ২০০৯ সালে ভারতীয় ক্রিকেট দলের আর এক জনপ্রিয় ক্রিকেটার সুনীল গাভাস্কার, আইসিসি-র হল অফ ফেমে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন। সুনীল গাভাস্কারকে ইতিহাসের অন্যতম সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান বলা হয়। তিনি ৩৪টি টেস্ট সেঞ্চুরি করার পাশাপাশি ১০,০০০ টেস্ট রানের মাইলফলক অতিক্রমকারী প্রথম ক্রিকেটার হয়েছিলেন।

৩। ভারতের আর এক অধিনায়ক কপিল দেবকে ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তরা সারা জীবন মনে রাখবেন, কারণ তাঁর হাত ধরেই আমাদের দেশে প্রথম বিশ্বকাপ এসেছিল ১৯৮৩ সালে। এই তারকা অলরাউন্ডার এখনও ভারতের সর্বোচ্চ উইকেট টেকার। ২০১০ সালে তিনি আইসিসি হল অফ ফেমে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন।

৪। টেস্ট এবং ওয়ানডে ক্রিকেটে ভারতের সর্বোচ্চ উইকেট টেকার অনিল কুম্বলে, ২০১৫ সালে আইসিসি-র হল অফ ফেমে অন্তর্ভুক্ত হন। ভারতীয় এই বোলার টেস্ট ক্রিকেটে ৬১৯টি এবং ওয়ানডে ক্রিকেটে ৩৩৭টি উইকেট নিয়েছিলেন। তিনি মোট ৯৫৬ উইকেট নিয়ে নিজের আন্তর্জাতিক কেরিয়ার শেষ করেছিলেন।

৫। ২০১৮ সালে আইসিসি-র হল অফ ফেমে অন্তর্ভুক্ত হন ক্রিকেটে দ্যা ওয়াল হিসাবে জনপ্রিয় ব্যাটার রাহুল দ্রাবিড়। প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়ক দ্বিতীয় ভারতীয় হিসাবে এবং সারা বিশ্বের মধ্যে সাতজন ক্রিকেটারের মধ্যে একজন ব্যাটার হিসাবে উভয় ফর্ম্যাটেই ১০,০০০ রান সম্পূর্ণ করেছেন। তিনি টেস্ট ক্রিকেটে ৩৬টি টেস্ট সেঞ্চুরি করে, ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিক হয়েছেন।

৬। আইসিসি-র হল অফ ফেমে ক্রিকেটের ভগবানের জায়গা হবে না তা কি সম্ভব? ২০১৯ সালে তিনি আইসিসি-র হল অফ ফেমে অন্তর্ভুক্ত হন। শচীন টেস্ট এবং ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে সারা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। টেস্টে সর্বাধিক সেঞ্চুরি (৫১) এবং ওয়ানডে-তে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (৪৯) সেঞ্চুরির মালিক তিনি, এর আগে ক্রিকেটে কোন খেলোয়াড় ১০০টি আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি করেননি।

৭। ২০২১ সালে আইসিসি হল অফ ফেমে অন্তর্ভুক্ত হন ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটের সেরা ভারতীয় অলরাউন্ডার হিসাবে বিবেচিত বিনু মাঁকড়। তিনিই প্রথম ভারতীয় যিনি টেস্ট ক্রিকেটে ১০০০ টেস্ট রান এবং ১০০টি উইকেট অর্জন করেছিলেন। তিনি মাত্র ২৩ ম্যাচ খেলে এই কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন। পঙ্কজ রায়ের সাথে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ টেস্ট ওপেনিং পার্টনারশিপ (৪১৩)-এর বিশ্ব রেকর্ডও রয়েছে তাঁর দখলে।

৮। ২০২৩ সালে আইসিসি হল অফ ফেমে প্রথম ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটার হিসাবে স্থান পান ডায়ানি এডুলজি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর অবসরের সময়কাল পর্যন্ত তিনি ১২০টি উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট টেকার ছিলেন। এডুলজি ১৮টি ওয়ানডে এবং ৪টি টেস্টে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

৯। ইতিহাসের অন্যতম সেরা ওপেনিং ব্যাটার বীরেন্দ্র সেহওয়াগকে ২০২৩ সালে আইসিসি হল অফ ফেমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তিনি টেস্ট ক্রিকেটে ট্রিপল সেঞ্চুরি করা প্রথম ভারতীয় এবং দেশের একমাত্র খেলোয়াড় যিনি দুবার এই কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন। সেহওয়াগ ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি এবং ২০১১ সালের বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলের অংশ ছিলেন।

১০। ২০২৪ সালে আইসিসি হল অফ ফেমে দ্বিতীয় ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটার হিসাবে স্থান পান নীতু ডেভিড। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনি ভারতের হয়ে ১৮২টি উইকেট নিয়েছিলেন। জাতীয় দলের হয়ে তিনি ১০টি টেস্ট এবং ৯৭টি ওয়ানডে খেলেছেন। তিনি প্রথম ভারতীয় বোলার যিনি মহিলাদের টেস্টে প্রথম ১০০টি উইকেট নিয়েছিলেন।

এই বছর আর কারা জায়গা পেলেন আইসিসি হল অফ ফেম তালিকায়? | ICC Hall Of Fame

এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, ২০২৫ সালে আইসিসি-র ‘হল অফ ফেম’-এ মহেন্দ্র সিং ধোনি ছাড়াও জায়গা পেয়েছেন আরও ৬ ক্রিকেটার। যাদের মধ্যে রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন ওপেনার ম্যাথু হেডেন, প্রাক্তন কিউই অধিনায়ক ড্যানিয়েল ভেট্টোরি, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন ওপেনার হাশিম আমলা, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন অধিনায়ক গ্রেম স্মিথ, পাকিস্তানের মহিলা ক্রিকেট দলের প্রাক্তণ অধিনায়ক সানা মির, এবং ইংল্যান্ডের প্রাক্তন উইকেটরক্ষক-ব্যাটার সারা টেলর।

সঙ্গে থাকুন ➥