বাঙালির বিশ্বাস তাদের ৬ নয় বরং ৭ ঋতু। আর তাদের ‘ঋতুরাজ’ বসন্ত নয়, বরং ‘ঋতুপর্ণ ঘোষ’ (Rituparno Ghosh)। আজ থেকে দশ বছর আগে ৩০ মে বাংলাকে ঋতুহীন করে না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন তিনি। আর যাওয়ার আগে উপহারস্বরূপ তিনি দিয়ে গেছিলেন, ‘দহন’, ‘বাড়িওয়ালি’, ‘নৌকাডুবি’, ‘চিত্রাঙ্গদা’, ‘রেইনকোট’ এরকম কত নাম। সম্প্রতি এই শিল্পীকে নিয়েই বিষ্ফোরক মন্তব্য করেছেন চিরঞ্জিত চক্রবর্তী (Chiranjeet Chakraborty)।
যাইহোক, এই বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই পরিচালকের শূন্যস্থান পূরণ হওয়ার নয় কোনোদিন। তিনি এক এমন গুণী ব্যক্তি ছিলেন যিনি বাংলা সিনেমাকে দেশে তো বটেই পৌঁছে দিয়েছিলেন বিশ্বের দরবারেও। আর সম্প্রতি তাকে নিয়েই কলম ধরেছেন অভিনেতা চিরঞ্জিত চক্রবর্তী। তার আগে বলি, ২০০০ সালে ঋতুপর্ণ ঘোষ পরিচালিত ‘বাড়িওয়ালি’ ছবিতে কিরণ খের, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, অভিষেক চট্টোপাধ্যায়, রূপা গঙ্গোপাধ্যায় সহ চিরঞ্জিত-ও অভিনয় করেছিলেন।
এইদিন অভিনেতা জানান, তার ‘ভয়’ ছবিটি দেখে পছন্দ হয় পরিচালকের। এরপরেই তারসাথে যোগাযোগ করেন ঋতুপর্ণ। চিরঞ্জিত জানান, ঋতুপর্ণ তাকে দীপু বলে ডাকতেন। কারণ তার আসল নাম দীপক চক্রবর্তী। এরপরেই ‘বাড়িওয়ালি’র জন্য কাস্ট করা হয় তাকে। এছাড়াও আরো দু তিনটে ছবির কথা বলেছিলেন তাকে। তবে পরে কোন কারণে চিরঞ্জিতের সঙ্গে কাজ করেননি তিনি।
সম্প্রতি এই ছবির শুটিং চলাকালীন ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা শেয়ার করেছেন সাংসদ অভিনেতা চিরঞ্জিত। ছবিতে অভিনয় করেছিলেন কিরণ খের। যার ভয়েস ডাবিং করেছিলেন রিতা কয়রাল। তবে ছবিটি যখন জাতীয় পুরস্কারের জন্য পাঠানো হয় তখন সেখানে এই বিষয়টা উল্লেখ ছিল না। এবং জাতীয় পুরস্কার যায় কিরণ খেরের ঝুলিতে। বিষয়টা নিয়ে বিতর্কও হয়েছিল প্রচুর। রিতা কয়রাল নিজেও সরব হয়েছিলেন এটা নিয়ে।
এদিকে চিরঞ্জিতের জন্য ডাবিং করেছিলেন সব্যসাচী চক্রবর্তী। যদিও তিনি নিজেও একবার ডাব করেছিলেন। তবে সেই ভয়েস ওভার ফেলে দিয়ে ঋতুপর্ণ বেশি ভরসা করেন সব্যসাচীকেই। এরজন্য অভিনেতার কাছে থেকে NOC ও চেয়ে নিয়েছিলেন পরিচালক। যদিও সেসময় অনেকেই অভিনেতাকে সেটা দিতে বারণ করেছিলেন, এমনকি সব্যসাচী চক্রবর্তী নিজেও। তবে চিরঞ্জিত ঋতুর প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। নাহলে হয়ত তার হাতেও জাতীয় পুরস্কার থাকত।
ঋতুপর্ণর কাজ প্রসঙ্গে চিরঞ্জিত বলেন, ছবির জন্য কিরণ খেরকে মুখে আঁচল দিয়ে কথা বলার স্টাইলটা ঋতুপর্ণ ঘোষই শিখিয়েছিলেন। তবে জাতীয় পুরস্কার না পাওয়ার আফসোসটা তার রয়েই গেছে। চিরঞ্জিতের কথায়, ‘হয়তো আমারও জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু সেই সুযোগ হারালাম’। একটা সুযোগ ছেড়ে দিয়ে খুব বেশি কিছু হারালাম কি! আজকে এই কথাগুলো বলছি বটে, তবে ঋতুর প্রতি আমার এই নিয়ে কোনও অভিযোগ নেই।’ অভিনেতার আরো সংযোজন, ‘এতটা পড়ে অনেকই হয়তো ভাবতে পারেন যে, আমি ঋতুর সমালোচনা করছি। এটা সমালোচনা নয়, এটা সত্য। আর আমার মনে হয়, আমার সঙ্গে ঋতুর সম্পর্কে সেই স্বচ্ছতা ছিল। তাই সত্যি কথাটা বলতে আমার কোনও ভয় নেই।’