বলিউড,বিনোদন,গসিপ,প্রেমকাহিনী,দেব আনন্দ,সুরাইয়া,Bollywood,Entertainment,Gossip,Love Story,Dev Anand,Suraiya

Moumita

পালিয়ে বিয়ের প্রস্তাব, খুনের হুমকি, ধর্মের বাধা, আস্ত একটা সিনেমার গল্প ছিল দেবানন্দ আর সুরাইয়ার প্রেম কাহিনী

প্রেমের শুরু হয় প্রাণ বাঁচানো দিয়ে, আর শেষ? নাহ্, এই সম্পর্কের কোনো শেষ নেই। পরিণতি পায়নি দেব আনন্দ আর সুরাইয়ার সম্পর্ক। যারা পুরোনো ভারতীয় সিনেমার ভক্ত তাদের কাছে এই প্রেম কাহিনী অজানা থাকার কথা নয়। বলিউডের প্রেম পর্বের অন্যতম ছিল দেব আনন্দ-সুরাইয়া সম্পর্ক। যদিও সম্পর্কের পরিণতি ছিল বিয়োগান্তক।

   

৪০-৫০ এর দশকে সুরাইয়ার রমরমা গোটা ভারতে। তার রূপের আগুনে পুড়ে ছাই হয়নি এমন পুরুষ খুঁজে বের করা দুষ্কর। নায়িকা ও গায়িকা হিসেবে তিনি তখন প্রথম সারিতে। খ্যাতির মধ্যগগনে ভাসছেন তিনি আর এদিকে দেব আনন্দ তখন সবে পা রেখেছেন ইন্ডাস্ট্রিতে। চেষ্টা করছেন পরিচিতি পাওয়ার। সুরাইয়ার সঙ্গে দেব আনন্দের প্রথম ছবি বিদ্যা ১৯৪৮ সালে। প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়েন দেব।

যদিও নায়িকার মননে তখনও সেরকম কোনোকিছু উঁকি দেয়নি। কিন্তু ওপর থেকে বিধাতা তখন মুচকি হাসছিলেন। বিদ্যা ছবিতে ‘কিনারে কিনারে চলে যায়েঙ্গ’ গানের শুটিংয়ের সময় নৌকো গেলো উলটে। সাঁতার না জানা সুরাইয়া যখন জলের তোড়ে নাকানিচুবানি খাচ্ছেন, সেই সময় নিজের প্রাণের তোয়াক্কা না করে দেব ঝাঁপিয়ে পড়েন জলে। বাঁচিয়ে নিয়ে আসেন সুরাইয়াকে।

ব্যাস, সেই থেকে শুরু। ভারতীয় চলচ্চিত্র ইতিহাসে এমন প্রেম বিরল। একে অপরের জন্য প্রাণ দিতেন যেন। এখন মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে তাহলে এমন গাঢ় প্রেম ভাঙলো কীভাবে? আসলে এক্ষেত্রে সম্পর্কের মূল অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিলো সুরাইয়ার দিদিমা বাদশা বেগম এবং তাদের ধর্ম। প্রথমত, পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সুরাইয়ার বিয়ে দিতে তাঁরা রাজি ছিলেন না। দ্বিতীয়ত দেব একজন হিন্দু সম্প্রদায়ের ছেলে। তাই এক জন ভিন্নধর্মী তাদের পরিবারের জামাই হবে এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি।

অবশেষে কোনো উপায় না দেখে পালিয়ে বিয়ে করারও প্রস্তাব দেন দেব। কিন্তু সামাজিক চক্ষুলজ্জার ভয়ে রাজি হননি সুরাইয়া। এমতাবস্থায় রাগে জ্ঞান হারিয়ে প্রেমিকাকে চড় মেরে দেব বলেছিলেন, ‘সুরাইয়া ভীতু ও কাপুরুষ। পরে অবশ্য অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমাও চান তিনি। শোনা যায়, তখনকার দিনে ৩ হাজার টাকার হিরের আংটি পরিয়ে দিয়েছিলেন সুরাইয়ার আঙুলে। যদিও সেই টাকা তিনি ধার করে জোগাড় করেছিলেন।

একসাথে ঘর বাঁধার জন্য কোনো চেষ্টাই বাকি রাখেননি দেব। আনন্দ বলেছিলেন, ভালবাসা ছাড়া কোনও ধর্মকে মানেন না তিনি। কিন্তু সাহস সঞ্চয় করে উঠতে পারেননি সুরাইয়া নিজেই। অবশেষে ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল একসঙ্গে অভিনয়ও। দেবের সাথে কোনোরকম যোগাযোগ করলে তাকে প্রাণে মেরা হবে এই হুমকিও পেয়েছিলেন সুরাইয়া। অতএব বন্ধ হলো দেখা সাক্ষাৎ।

তবে দেব তবুও এসেছিলো নিজের প্রেয়সীর কাছে। বাড়ির পিছনের সিঁড়ি দিয়ে উঠে সুরাইয়ার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন তিনি। সেখানেই নাকি তাঁদের শেষ দেখা হয়েছিল। বন্দোবস্ত করে দিয়েছিলেন সুরাইয়ার মা। এরপরই চিরকালের জন্য আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন দুজন। পরবর্তীকালে দেব বিয়ে করে সংসারী হলেও অবিবাহিত থেকে যান সুরাইয়া। দেব আনন্দকে বলা হতো ভারতীয় সিনেমার ‘গ্রেগরি পেক’। শোনা যায়, প্রেয়সীকে খুশি করতেই তিনি গ্রেগরি পেক-কে অনুসরণ করতেন। কারণ গ্রেগরি পেক ছিলেন সুরাইয়ার প্রিয় অভিনেতা।